মাস্ক ছাড়া এখনও ঘুরছেন অনেকে। ফাইল চিত্র।
শহরে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা। কলকাতা পুরসভার ১৫ দিন আগের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে এই বৃদ্ধির হার। শুধু তা-ই নয়, চলতি মাসের প্রথম দু’দিনের মধ্যেই নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে ২৮ জন। ফলে আশঙ্কা বাড়ছেই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের।
গত অগস্টের প্রথম ১৫ দিন কলকাতা পুর এলাকায় গড়ে দৈনিক করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা আশির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। সেখানে চলতি মাসের ২ তারিখে শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩৭। এমনটাই জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভার তথ্য। অথচ ১২ জুলাই কলকাতায় মোট ৩৪ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। গোটা জুলাই জুড়ে পুর এলাকায় দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৪০-৫০-এর মধ্যে ওঠানামা করছিল। এর পর থেকেই ধীরে হলেও ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে সংক্রমিতের সংখ্যাটা। পুর তথ্য অনুযায়ী, ২৪ অগস্ট কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০৭ জন। ২৭ এবং ২৮ অগস্ট যথাক্রমে ১২৩ এবং ১২৭ জন সংক্রমিত হন। ১ সেপ্টেম্বর ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৯-এ। ২ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হন ১৩৭ জন। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে তথ্য সামনে আসছে।
পুরসভার চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, শহরে যে হারে ফের সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ছে, তা জোরদার করছে তৃতীয় ঢেউয়ের উদ্বেগ। বৃহস্পতিবার পুর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সমস্ত পুর চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী। ওই বৈঠকে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পুরসভার চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছে। পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা নাগরিকের কোভিডের উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকেরা যাতে গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা করেন, সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জ্বর-সর্দির মতো বা কোভিডের অন্য উপসর্গ আছে কি না, তা স্বাস্থ্যকর্মীদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
গত দু’মাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকার কারণ হিসেবে পুরসভারই একটি অংশ দায়ী করছে, দুয়ারে সরকার বা স্বাস্থ্য সাথীর মতো শিবিরগুলিকে। যেখানে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার জন্য আয়োজিত শিবিরে উভয় তরফই কোভিড নিয়ম না মেনে উপস্থিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে শহরে জুড়ে উৎসবের মরসুমের ভিড়ও বিধিভঙ্গের যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, সংক্রমণ বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানের দিকে নজর রেখেই শহরের সেফ হোমগুলি দ্রুত চালু করা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করতে চলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার ফের জনগণের কাছে আবেদন রাখেন, ‘‘দয়া করে সবাই মাস্ক পরে বাইরে বেরোন। হাত ঘন ঘন জীবাণুমুক্ত করবেন। অযথা ভিড় বাড়াবেন না। দ্রুত নিকটবর্তী কেন্দ্র থেকে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে নিন।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, ‘‘রোজ যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, সেটা অশনি সঙ্কেত। এখনও সতর্ক হতে দেরি হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। দুটো ঢেউয়ের তীব্রতা দেখার পরেও মানুষকে যে মাস্ক পরার পাঠ দিতে হচ্ছে, সেটাই আশ্চর্যের।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মাস্ক পরা নিয়ে প্রশাসনকেও অনেক কড়া হতে হবে। বিভিন্ন বাজারে মাস্ক না পরায় ধরপাকড় শুরু করেছিল পুলিশ। এমন অভিযান প্রতিদিন চালাতে হবে।