সম্পদ: টালা সেতু চত্বরের মাটির তলা থেকে উঠছে এমনই তামার তার। নিজস্ব চিত্র।
মাটির নীচ থেকে উঠছে গুচ্ছ গুচ্ছ তামার তার! যা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে কেজি দরে। দাম উঠছে প্রতি কেজিতে সাতশো থেকে আটশো টাকা! এ ভাবেই নির্মীয়মাণ টালা সেতু চত্বর থেকে গত ২০ দিনের মধ্যে নয়-দশ লক্ষ টাকার তামার তার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে শোরগোল পড়তেই আসরে নামতে হয়েছে খোদ ওই এলাকা, অর্থাৎ কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষকে। পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। কাউকে এখনও গ্রেফতার করা না হলেও একটি অভিযোগ দায়ের করে মাটির তলা থেকে তার ওঠানোর বিষয়টি আপাতত বন্ধ করা গিয়েছে বলে দাবি অতীনবাবুর।
ঘটনার সূত্রপাত এ মাসের শুরুর দিকে। দীর্ঘদিন ধরেই টালা সেতুর সংস্কারের কাজ চলছে। দৈর্ঘ্যে আগের চেয়ে চওড়া হচ্ছে সেতুটি।
বর্তমানে শ্যামবাজারের দিকের অংশে কাজ চলছে জোরকদমে। সেখানে স্তম্ভ বসানোর জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছিল সেতুর পাশে। তখনই মাটির নীচ থেকে কয়েক গোছা তামার তার উঠে আসে। দিনকয়েকের মধ্যে টালা সেতুর এক পাশে নতুন করে সার্ভিস রোড তৈরির জন্য মাটি খোঁড়া শুরু হতেই আরও তার উঠতে শুরু করে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘শ্যামবাজারের দিকে টালা সেতুতে ওঠার মুখে বাঁ দিকের রাস্তায় কাজ চলছিল। সেখান থেকেই মোটা মোটা তামার তার উঠতে শুরু করে। ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডে। তারগুলি এক-একটি লম্বায় ৩০-৩৫ মিটার। সম্ভবত পঞ্চাশ বা ষাটের দশকেরও আগের জিনিস। হেমন্ত সেতু হওয়ারও আগে থেকেই হয়তো সেগুলি মাটির নীচে রয়েছে। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তারগুলি বিদ্যুতের না অন্য কিছুর!’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সব তার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের তির স্থানীয় একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। বিধায়ক এবং স্থানীয় থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, ৩/১/১ নম্বর বি টি রোডের ঠিকানায় থাকা ওই ক্লাবের কয়েক জন সদস্যই সেতুর নির্মাণস্থল থেকে তার বার করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘কখনও দেখেছি, তামার ওই তার কেটে ছোট করে ব্যাগে ভরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কখনও কাটতে না পেরে ওই লম্বা ভারী তারই ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে অন্যত্র। এমন বেশ কিছু ছবি এলাকায় ঘুরছে। বিধায়ককে জানানো অভিযোগের সঙ্গেও সেই ছবি দেওয়া হয়েছে। তারের খবর জানাজানি হতেই এলাকায় রাতে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। তামা চুরি করতে এসে হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’’
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, নির্মীয়মাণ সেতুর কাছেই দোতলা ওই ক্লাব। তারা দুর্গাপুজোও করে। কিন্তু ক্লাবের ঠিকানা হিসেবে যে নম্বরের উল্লেখ করা হয়, তেমন কোনও ঠিকানা কলকাতা পুরসভার খাতায় নেই বলে স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ। তার বিক্রিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি, ক্লাবের সেই সম্পাদক অনুজিৎ নানের যদিও দাবি, ‘‘এমন কোনও খবর আমার কাছে নেই।
তার নিয়ে কারা কী করেছে, বলতে পারব না।’’ সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থা যাদের সাব-কন্ট্র্যাক্ট দিয়েছে, সেই সংস্থার কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন সিংহ যদিও বললেন, ‘‘ওই ক্লাবের কয়েক জনের বিরুদ্ধে তার বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। এত বছর পরে মাটির নীচে কিছু পাওয়া গেলে তা সরকারি সম্পত্তি। কেউই তা বিক্রি করতে পারেন না। থানা-পুলিশও করা হয়েছে।’’ বিধায়ক অতীনবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ বলছে, মাটি খুঁড়লে বিএসএনএল হোক বা সিইএসসি, বহু সংস্থারই তার বেরিয়ে আসে অনেক সময়ে। কিন্তু পরে ওই সব সংস্থা আর তারের দায়িত্ব নিতে চায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারের পরিমাণ এতটা বেশি বলেই শোরগোল পড়েছে। পুলিশকে বলেছি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। মাটি থেকে ওই ভাবে তার তোলা এখন বন্ধ করা হয়েছে।’’