ফাইল চিত্র।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কিছু প্রাক্তনী গত শনিবার অংশ নিয়েছিলেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী একটি মিছিলে। যার প্রেক্ষিতে ‘সাউথ পয়েন্ট এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সেই পোস্টে জানানো হয়েছে, সাউথ পয়েন্টের প্রাক্তনী বলে দাবি করে ওই ‘রাজনৈতিক’ মিছিলে কেউ কেউ যোগ দিলেও এর সঙ্গে প্রাক্তনীদের ওই সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি অনুমোদন করেন না বলে দাবি করা হয়েছে।
গত শনিবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দলীয় পতাকাবিহীন এক মিছিলে শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের মানুষদের সঙ্গে হাঁটেন সাউথ পয়েন্টের কিছু প্রাক্তনীও। তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘কনসার্নড সাউথ পয়েন্ট অ্যালামনি অ্যান্ড ফ্রেন্ডস।’ রবিবার বিষয়টি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজে যা লেখা হয়েছে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীরাও নিজেদের বক্তব্য জানাতে শুরু করেছেন। অনেকেরই বক্তব্য, ওই স্কুলের প্রাক্তনী হিসেবে পরিচয়টা খুবই গর্বের। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি ছাড়া তাদের নাম ব্যবহার করা যাবে না। এ সব মানা হবে না।
সে দিনের মিছিলে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে যাঁরা প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তমালী চৌধুরী। ১৯৮৫ সালে ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক। সোমবার তিনি বললেন, ‘‘অহেতুক বিতর্ক তৈরি
করা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। স্কুলের লোগো আমরা ব্যবহার করিনি। বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শও নিয়েছি। কোনও অনিয়ম করিনি।’’ প্রাক্তনীদের প্রশ্ন, যে স্কুলে পড়েছেন, সেই স্কুলের প্রাক্তনী হিসেবে কেন কোনও বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারবেন না? ওই মিছিলে ছিলেন ’৮৩ সালে সাউথ পয়েন্ট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা অমিত চৌধুরী। উচ্চ মাধ্যমিকের
পরে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছেন। এখন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের কর্মসমিতির সদস্য। অমিত এ দিন বলেন, ‘‘প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে আর প্রাক্তনী সংসদের পক্ষ থেকে— এই দু’টি কথার পার্থক্য আমি জানি। প্রতিবাদের অধিকার অবশ্যই আমাদের রয়েছে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী ’৬৯ সালে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিলেন ওই স্কুল থেকে। প্রাক্তনী সংগঠনের ফেসবুক পেজে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড-সহ দুনিয়া জুড়ে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা বহু বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। তার জন্য প্রাক্তনী সংসদের অনুমতি নিতে হয় না।’’ তাঁর প্রশ্ন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রতিবাদ করায় অ্যাসোসিয়েশন কী করবে? সার্টিফিকেট কেড়ে নেবে? না কি স্কুলের দিনগুলিকে কেড়ে নেবে?
সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাউথ পয়েন্টের প্রাক্তনী, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে ১৯৯৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা পৃথা দাস মহাপাত্রের বক্তব্য, ‘‘অভিজিৎ বিনায়ককেও কি অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি নিয়ে মতামত দিতে হবে?’’ পেশায় চিকিৎসক পৃথা থাকেন লন্ডনে। জানালেন, মিছিলে থাকতে না পারলেও এই উদ্যোগে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষ্ণ দামানি এ দিন জানিয়েছেন, স্কুল হিসেবে তাঁরা রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হতে চান না, সে সরকারের
নীতির পক্ষে হোক বা বিপক্ষে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য, পড়ুয়ারা যাতে পূর্ব-নির্ধারিত পক্ষপাত ছাড়াই ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারে, সেই ভাবে তাদের তৈরি করা।’’
এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন প্রাক্তনীদের অনেকেই। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন ঋতম মিত্র। শনিবারের মিছিলে তিনিও ছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এই ভয়ঙ্কর আইনের প্রতিবাদ করা সকলের কর্তব্য। তা-ই করেছি। এর জন্য কারও অনুমতি লাগবে কেন?’’