নাগরিক সমাজের মিছিলে কলতান দাশগুপ্তের ছবি-সহ ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র।
নাগরিক সমাজের রিলে মশাল মিছিলের শুক্রবার একাধিক ব্যানারে দেখা গেল অডিয়ো-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া এবং পরে জামিনে ছাড়া পাওয়া সিপিএমের যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের ছবি। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শুক্রবারের মিছিলের আয়োজক ছিল অনেকগুলি সংগঠন এবং মঞ্চ। জানা গিয়েছে, কলতানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তিও জানায় তাদের অনেকে। প্রশ্ন উঠছে, এই মশাল মিছিল তো কলতানের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে নয়। এই মিছিল হয়েছে আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে। তা হলে সেখানে কেন পরিচিত সিপিএম নেতার ছবি ব্যবহার করা হল?
বিকাল ৪টের সময়ে হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শুরু হয়েছিল মশাল মিছিল। যা ৪২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা ছিল শ্যামবাজারে। সেই মিছিলেই বিভিন্ন মাপের ব্যানারে দেখা গিয়েছে কলতানের ছবি। মিছিল শুরুর সময়ে সামনের দিকেই ছিল সেই ব্যানার। সূত্রের খবর, আয়োজক সংগঠনগুলির অনেকের চাপে সেই ব্যানার পিছনের দিকে সরাতে হয়েছে।
একটি প্রকাণ্ড ব্যানারের এক দিকে রয়েছে কলতান, অন্য দিকে রূপসা মণ্ডল নামের এক তরুণীর ছবি। হালতুর বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া রূপসাকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সমাজমাধ্যমে উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। প্রসঙ্গত, রূপসা সেই অর্থে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে তাঁর মুক্তির দাবিতে বামেরা সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছিল। সিপিএম আইনি সহায়তা দিয়েছিল রূপসার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রেও।
নাগরিক মিছিলের ব্যানারে কলতানের ছবি ব্যবহার প্রসঙ্গে ‘মেয়েরা রাত দখল করো, দিন বদল করো’র অন্যতম মুখ রিমঝিম সিংহ বলেন, ‘‘এটা নাগরিক মিছিল এবং আমরা চাইছি না সংসদীয় রাজনীতিতে রয়েছেন এমন কোনও পরিচিত মুখ এখানে থাকুন। কলতান পরিচিত রাজনৈতিক মুখ। ওই ব্যানার দেখে আমাদের তরফে তাই বলা হয়েছিল ওটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য।’’ রিমঝিম জানিয়েছেন, পরে মিছিলের সামনের দিকে সেই ব্যানার তিনি আর দেখতে পাননি।
বৃহস্পতিবার কলতানকে জামিন দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার সকালে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। নাগরিক মিছিলে কলতানের ছবি প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কলতানদাকে সকালেই নাগরিকদের অনেকে বলেছিলেন বিকেলের মিছিলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উনি স্বভাবগত ভাবেই নেপথ্যে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি তখনই জানিয়েছিলেন, যাবেন না। কলতানের সহনাগরিকেরা তাঁর ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ তিনিও এই আন্দোলনের এক জন নীরব সংগঠক। রাজনীতি করলে তাঁর নাগরিক পরিচয় থাকবে না সেটাও বোধ হয় একটি সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে যাবে।’’
দলহীন, ঝান্ডাহীন নাগরিক মিছিলে সিপিএমের যুবনেতার ছবি ব্যবহার করার প্রসঙ্গে প্রত্যাশিত ভাবেই কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। শাসকদলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিপিএমের অবস্থা এমনই যে, নিজেদের পার্টির নামে মিছিল ডাকলে তাতে যে লোক হবে না, সেটা নিজেরাও জানে। তাই আরজি করের বিচার চাই ব্যানারে নাগরিক মিছিল ডাকতে হয়। আবার সেই মিছিলের সামনে দলের নেতার ছবি রেখে মরিয়া চেষ্টা করতে হয় রাজনৈতিক মুনাফা তোলার। তিনি ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি জামিন পেয়েছেন, বেকসুর খালাস পাননি। কিন্তু তাতেও সিপিএমের শূন্যের ঘড়া পূর্ণ হবে না।’’