ফাইল চিত্র।
মেট্রোয় সফর করতে কাউন্টারে নির্দিষ্ট স্টেশনের কথা জানান যাত্রী। সেই মতো একটি টোকেন দেওয়া হয় তাঁকে। কাউন্টারে থাকা ব্যক্তি যদি ভুলবশত ওই টাকার বিনিময়ে কম দূরত্বের টোকেন দেন, সে জন্য কিন্তু ভুক্তভোগী হন যাত্রীটি। হেনস্থা এবং জরিমানার বোঝা বইতে হয় তাঁকেই। সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের একটি মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে এই বিষয়টি সামনে এসেছে। এক যাত্রীর দায়ের করা মামলায় মেট্রো কর্তৃপক্ষকে ১১ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ব্যারাকপুরের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী কমল ঘোষদস্তিদার দমদম থেকে ময়দান পর্যন্ত মেট্রোয় সফর করছিলেন। তাঁর দাবি, সে জন্য তিনি পনেরো টাকার বিনিময়ে টোকেন কিনেছিলেন। অভিযোগ, ময়দান স্টেশন থেকে বেরোনোর সময়ে সেটি স্মার্ট গেটে দিলেও তিনি বেরোতে পারেননি। কর্তব্যরত কর্মী টোকেন পরীক্ষা করে জানান, তিনি দশ টাকার টিকিট কিনেছেন। এ জন্য তাঁকে জরিমানা দিতে হবে বলেও ওই কর্মী জানান।
কমলবাবুর কথায়, ‘‘নিয়মিত মেট্রোয় যাতায়াত করি। পনেরো টাকা দিয়েই টিকিট কেটেছিলাম। তাঁকে এ কথা বললেও তিনি বলতে থাকেন, আমি বেআইনি ভাবে যাতায়াত করছি। এর পর স্টেশন মাস্টারের কাছে যাই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘স্টেশন মাস্টারকে বোঝালেও এক কর্মী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন আমার সঙ্গে। বিকল্প না থাকায় ২৫০ টাকা জরিমানা দিই।’’
তিনি জানান, বৈধ টিকিট কাটা সত্ত্বেও তাঁর হয়রানি এবং সম্মানহানির প্রতিকার চেয়ে পরদিন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে বিস্তারিত ই-মেল করেন কমলবাবু। উত্তর না পেয়ে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তার রায়ে ওই যাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছিল। বিচারক কমল দে রায়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘যাত্রী মেট্রোর টোকেন হাতে পেলেও সেখানে কোনও দাম লেখা থাকে না। অথবা নির্দিষ্ট দামের টোকেনের নির্দিষ্ট রং (কালো, হলুদ, নীল প্রভৃতি) থাকলে এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারী যাত্রী হয়রানি থেকে রক্ষা পেতেন।’’ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত রায় বেরোনোর এক মাসের মধ্যে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে ২৫৫ টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে মামলা চালানোর খরচ বাবদ কমলবাবুকে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।
কলকাতা জেলা আদালতের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে মেট্রো। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মেট্রো কর্তৃপক্ষের যাবতীয় আবেদন খারিজ করে। গত ১৮ অক্টোবর আদালত তার রায়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বলেছে, ‘‘এক জন দাগি দুষ্কৃতীও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারী যাত্রীকে বিন্দুমাত্র সুযোগ দেওয়া হয়নি।’’ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য জেলা আদালতের রায়কে বহাল রেখে তাঁদের রায়ে জানান, ‘‘টিকিট কাটার পরে টোকেনের দাম যাত্রীকে জানানো মেট্রোর দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর দায় কোনও ভাবেই যাত্রীর উপর চাপানো যাবে না। কোনও জিনিসের দাম তার গায়ে না লেখা মানে কর্তৃপক্ষের অসাধু ব্যবসা চালানোর প্রচেষ্টা।’’ রাজ্য আদালত রায় বেরোনোর এক মাসের মধ্যে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে এগারো হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দিয়েছে।
রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় শুনে খুশি কমলবাবু বলেন, ‘‘বৈধ দামের টিকিট সত্ত্বেও সে দিন মেট্রো আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছিল তা কোনও দিন ভুলব না। এই মামলা নিয়ে যত দূর যেতে হয় যাব।’’ রায় প্রসঙ্গে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রায়ের কপি এখনও হাতে আসেনি। বিষয়টি আমাদের আইন বিভাগ দেখছে। আদালতের নির্দেশ মেনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’