প্রতীকী ছবি।
গত বছরের মতো এ বারও কি বর্ষায় কলকাতাকে জল-যন্ত্রণায় ভুগতে হবে?
বর্ষা আসতে এখনও মাস দুয়েক বাকি। কলকাতা পুরসভার কর্তারা জানিয়েছেন, জমা জলের সমস্যা থেকে বাঁচতে শহরের নিকাশি খালগুলির সংস্কারের কাজ শুরু করতে গত বছরের জুন মাসেই সেচ দফতরকে বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় এক বছর পরেও খাল সংস্কারের কাজে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি সেচ দফতর। এ শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬টি নিকাশি খাল রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, মণি খাল সংস্কারের কাজে এ মাসেই হাত দিয়েছে সেচ দফতর। বেহালার একটি ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘বর্ষা তো প্রায় দোরগোড়ায়। এখন কাজ শুরু করলেও তেমন সুবিধা হবে কি? এ হল মরণকালে হরিনামের মতো!’’
খাল সংস্কারের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে গত ৩১ জানুয়ারি সেচ দফতর, কেইআইআইপি এবং কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে পুরভবনে বৈঠক করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘‘খাল সংস্কারের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সেচ দফতরের আধিকারিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় ওঁরা বলেন, বিষয়টি প্রসেসিংয়ে আছে। আমি ওঁদের জানিয়েছি, মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রসেসিং চললে তার পরে তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। খাল সংস্কার না হলে বৃষ্টির জমা জল শহর থেকে বার করা মুশকিল হবে।’’
এ দিকে, এপ্রিল মাস অতিক্রান্ত হতে চললেও খাল সংস্কারের কাজ পুরোদমে শুরু না হওয়ায় সেচ দফতরের উপরে ক্ষুব্ধ পুরসভার নিকাশি বিভাগের আধিকারিকেরা। এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৃষ্টির জমা জল ছোট-বড় ১৬টি খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ওই খালগুলির নাব্যতা কমে গিয়েছে। বেহালার জমা জল সেখানকার চড়িয়াল ও মণি খালের মাধ্যমে গঙ্গায় গিয়ে পড়ে। ওই খাল দু’টির সংস্কার না হলে বেহালায় জল জমার সমস্যা কোনও দিনই দূর হবে না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মণি খালের সংস্কারের জন্য সেচ দফতর সম্প্রতি ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পেয়েছে। পুরসভার ১৪ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সংহিতা দাসের কথায়, ‘‘খাল থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ হচ্ছে। খাল সংস্কারের জন্য যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। বর্ষা আসতে দেরি নেই। দ্রুততার সঙ্গে কাজ না হলে সামনের বর্ষায় ফের ভোগার আশঙ্কা রয়েছে।’’
মণি খাল ছাড়াও সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে শহরের আরও ১৫টি খাল। পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই খালগুলি আবর্জনায় ভর্তি। নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে ভারী বৃষ্টিতে শহরে জল জমা ঠেকানো যাবে না।’’ পুরসভা গত বছরের জুন মাসে চিঠি দিলেও সেচ দফতর খাল সংস্কারের কাজ শুরু করতে এত দেরি করল কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র শুধু বলেন, ‘‘এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল সচিবের সঙ্গে কথা বলুন।’’ সেচ দফতরের বিশেষ সচিব প্রভাত মিশ্রকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে। এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও তার উত্তর মেলেনি।
আগামী বর্ষায় বেহালাবাসী ফের জল-যন্ত্রণায় ভুগতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন পুরসভার নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা। বেহালায় নিকাশির কাজে দেরি করার জন্য মাসকয়েক আগেই কেইআইআইপি-র আধিকারিকদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভার নিকাশি বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বেহালা ও জোকায় বর্ষার আগে যে সমস্ত নিকাশির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেগুলি শেষ হতে দেরি হবে। করোনার জন্যই নাকি কাজের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল।
এক দিকে নিকাশি খালগুলির সংস্কার না হওয়া এবং অন্য দিকে কেইআইআইপি-র কাজে দেরি। দুইয়ে মিলে সামনের বর্ষায় ফের ভোগান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।