জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা অগ্নি-যুদ্ধে শামিল হন, সেই দমকলকর্মীরাই গত পাঁচ বছর ধরে ঠিক মতো তাঁদের পোশাক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। প্রতীকী ছবি।
আগুন নেভানোর কাজের জন্য গত কয়েক বছরে দমকলের নতুন ইঞ্জিন এসেছে এক হাজারের বেশি। পাশাপাশি, সরু গলিতে যাতে দমকলের ঢুকতে সমস্যা না হয়, তার জন্য কেনা হয়েছে কয়েকশো মোটরবাইক। অথচ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা অগ্নি-যুদ্ধে শামিল হন, সেই দমকলকর্মীরাই গত পাঁচ বছর ধরে ঠিক মতো তাঁদের পোশাক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে দমকল দফতরের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে পোশাক না পাওয়ায় সমস্যা তো হচ্ছেই। এত দিন তন্তুজের থেকে কাপড় কিনে দমকলকর্মীদের পোশাক বানানো হত। এ বার ঠিক হয়েছে, প্রত্যেক দমকলকর্মীদের পোশাক বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হবে। সেই প্রস্তাব অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’
রাজ্যের ১৪১টি দমকল কেন্দ্রে প্রায় ছ’হাজার কর্মী রয়েছেন। নিয়ম মতো, প্রতি বছর দমকলকর্মীদের চার সেট করে পোশাক পাওয়ার কথা। এ ছাড়া, প্রতি বছর একটি জুতো এবং একটি গামবুট পাওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে দমকলকর্মীরা সে সবের প্রায় কিছুই না পাওয়ায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন। তাপ্পি দেওয়া গামবুট পরে আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক সময়েই বিপদের মুখে পড়ছেন তাঁরা। কেউ কেউ নিজেদের টাকায় পোশাক তৈরি করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
দমকল দফতর সূত্রের খবর, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে কর্মীদের জন্য বরাদ্দ পোশাক তাঁরা পেয়েছেন তিন বছর পরে, ২০২১ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ২০১৮-’১৯ থেকে ২০২২-’২৩— এই ক’টি বছরের বরাদ্দ পোশাক এখনও মেলেনি। দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, তন্তুজের থেকে গত কয়েক বছর ধরে পোশাক তৈরির কাপড় নেওয়া হলেও মোটা অঙ্কের টাকা তাদের শোধ করেনি দমকল। ফলে, তন্তুজও আর কাপড় সরবরাহ করতে চাইছে না। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দমকল দফতরের থেকে আমাদের তিন কোটি চার লক্ষ টাকা বকেয়া। বার বার তাদের জানানো হলেও উত্তর মিলছে না।’’
এই প্রসঙ্গে দমকলের সচিব মনোজ আগরওয়াল বলেন, ‘‘তন্তুজ আমাদের থেকে টাকা পাবে ঠিকই। কিন্তু তার পরিমাণ এত নয়।’’ দমকল সূত্রের খবর, সম্প্রতি দফতরে এক হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণরত এমনই এক কর্মী জানালেন, সবে তাঁদের চাকরিজীবন শুরু হল। কিন্তু নতুন পোশাক কবে পাওয়া যাবে, তা জানা নেই কারও। ওই কর্মী বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে দিনের পর দিন এক পোশাক পরে থাকতেও সমস্যা হচ্ছে।’’ উত্তর কলকাতার একটি দমকল কেন্দ্রের এক কর্মীর কথায়, ‘‘নতুন পোশাক না পাওয়ায় নিজের টাকায় বাধ্য হয়ে পোশাক তৈরি করেছি।’’ দমকলের ডিজি জানান, কর্মীরা যাতে দ্রুত পোশাকের টাকা পান, সেই বিষয়ে অর্থ দফতরকে জানানো হয়েছে।