Bally

Bally: ‘ভেন্টিলেশন’ থেকে বেরোতে পারবে কি বালির কেদারনাথ

প্রাচীন জনপদটির কী কী উন্নয়ন হবে, তা সময় বলবে। কিন্তু বহু প্রাচীন ও স্মৃতিবিজড়িত হাসপাতালের কী হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বালিতে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৩
Share:

হাল: বিবর্ণ, ভাঙাচোরা অবস্থায় বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

শতবর্ষ পার করে জরাগ্রস্ত শরীরে টিকে আছে শুধু নাম-পরিচয়। অন্যকে পরিষেবা দেওয়ার বদলে নিজেই এখন ‘ভেন্টিলেশন’-এ!

Advertisement

এ রাজ্যে প্রতিটি স্তরে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য, সেখানে এক সময়ে রমরমিয়ে চলা প্রায় ১৩৫ বছরের ‘বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন’ এখন এমনই অবস্থায়। হাওড়ার সঙ্গে বালি সংযুক্ত হওয়ার পরে জিটি রোডের উপরের ওই তেতলা হাসপাতালের আমূল সংস্কারের পরিকল্পনা করেন পুর কর্তৃপক্ষ। চার বছর আগে নতুন হাসপাতালের শিলান্যাস হলেও, আজ পর্যন্ত একটি ইটও গাঁথা হয়নি। বরং আড়াই বছর ধরে বন্ধ হাসপাতাল। সদ্য হাওড়া থেকে আলাদা হয়েছে বালি পুরসভা। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘অত্যাধুনিক হাসপাতালের স্বপ্ন দেখালেও, হাওড়া তা করেনি। এ বার বালি কি সেই দায়িত্ব পালন করবে?’’

প্রাচীন জনপদটির কী কী উন্নয়ন হবে, তা সময় বলবে। কিন্তু বহু প্রাচীন ও স্মৃতিবিজড়িত হাসপাতালের কী হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বালিতে। বন্ধ হাসপাতালেই প্রহরীর কাজ করেন সৌমেন্দ্রনাথ কর। বললেন, ‘‘আমার মা-ও এই হাসপাতালে জন্মেছিলেন। আমি ও আমার সন্তানেরও এই হাসপাতালেই জন্ম। আজ এমন অবস্থা দেখলে কষ্ট হয়।’’ ইতিহাস বলছে, বালি অঞ্চল এক সময়ে বর্ধমান রেঞ্জের অধীনে ছিল। তৎকালীন প্রধান জন বিমস্-এর নামে বালিতে ‘বিমস্ চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি’ চালু হয়েছিল।

Advertisement

১৮৮৩ সালে হাওড়া থেকে বালি আলাদা হওয়ার পরে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রটির দায়িত্ব নেয় বালি পুরসভা। ১৯০৭ সালে অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য ধাত্রী নিয়োগ করা হয়। চালু হয় দু’শয্যার অন্তর্বিভাগ। ১৯৪৬ সালে আলাদা প্রসূতি বিভাগ তৈরির পরিকল্পনা হয়। স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি হয় মাতৃসদন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনাথবন্ধু রায় ২০টি শয্যার মাতৃসদনের উদ্বোধন করেন। বালি ছাড়াও ডোমজুড় বিধানসভা, হুগলি এলাকার বহু প্রসূতি ন্যূনতম খরচে বালি পুরসভা পরিচালিত এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতেন। এখন সেই প্রসূতি বিভাগ, লেবার রুম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন— সবই ভাঙাচোরা।

২০০৫ সালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ ১২টি শয্যার নিয়োনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট তৈরি হলেও আজও তা তালাবন্ধ। অস্থিরোগের চিকিৎসায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ চালু হওয়া দ্বিতীয় অপারেশন থিয়েটারও ভগ্নপ্রায়। ইউএসজি-র যন্ত্র ধুলোয় চাপা পড়ে আছে। তেতলা বাড়ির চার দিকে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গল। এক সময়ে সব রকম রোগের বহির্বিভাগ চললেও এখন কোনও মতে স্ত্রীরোগ এবং মেডিসিনের বহির্বিভাগ চলছে। এ দিকে উন্নত পরিষেবা মিলছে প্রতিবেশী উত্তরপাড়া ও বরাহনগরের পুর হাসপাতালগুলি থেকে।

স্থানীয় বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই হাসপাতাল বালির মানুষের আবেগের জায়গা। তাই উন্নত হাসপাতাল, বিশেষত সদ্যোজাত ও শিশুদের চিকিৎসা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাতে হাওড়া ও অন্যান্য জেলার শিশুরাও চিকিৎসা পাবে। বিষয়টি মৌখিক ভাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’’

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বালির উন্নয়নে আরও জোর দিতেই হাওড়া থেকে আলাদা করা হয়েছে। তাই পুরসভা পরিচালিত ওই হাসপাতাল উন্নত পরিকাঠামো নিয়ে ফের চালু হবে। শিশু চিকিৎসাতেও জোর দেওয়া হবে।’’

যদিও বাসিন্দদের একাংশের কাছে বড় প্রশ্ন, ‘‘বাম আমলে আইসিইউ-তে যাওয়া কেদারনাথ হাসপাতাল হাওড়া পুরসভার হাতে পড়ে ভেন্টিলেশনে গিয়েছে। আদৌ কি তার পুনরুজ্জীবন ঘটবে? ঘটলে, তা কবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement