Corona virus

করোনার দোসর হয়ে আসা শিশুদের জটিল রোগ বাড়াচ্ছে চিন্তা

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, কাওয়াসাকি পুরনো রোগ। তবে করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের তা হচ্ছে না। যেটি হচ্ছে, সেটিকে বলা হয় ‘পোস্ট কোভিড মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়অর্ডার’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৮
Share:

প্রতীকী চিত্র

বেশ কয়েক দিন ধরেই জ্বর দু’বছরের শিশুটির। খাওয়াদাওয়া প্রায় করছে না বললেই চলে। সারাক্ষণই নেতিয়ে রয়েছে। শিশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি কিছু ওষুধ দিলেও জ্বর ছাড়ছে না তার। পরিজনদেরও একাংশ বললেন, ‘এটা ভাইরাল জ্বর। কয়েক দিন পরেই কমে যাবে।’ কিন্তু আদতে তা নয়। আরও কয়েক দিন পরে বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গেল, কোভিডের পরে ‘কাওয়াসাকি’র মতো একটি রোগে আক্রান্ত হয়েছে ওই শিশুটি।

Advertisement

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, কাওয়াসাকি পুরনো রোগ। তবে করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের তা হচ্ছে না। যেটি হচ্ছে, সেটিকে বলা হয় ‘পোস্ট কোভিড মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়অর্ডার’। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক শিশুই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাড়িতে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে যদি শিশুর জ্বর হয় এবং তার কারণ বোঝা না যায়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে পরিবারের সদস্যের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানাতে হবে।’’

করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে ‘জ্বর’ শব্দটাই একটা ভীতি তৈরি করছে, সেখানে একটি শিশুর টানা জ্বর, ঝিমুনি ভাব ও গায়ে লাল চাকা দাগের মতো শারীরিক অবস্থা বাবা-মায়ের কাছে অবশ্যই চিন্তার কারণ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক অসীম মল্লিক বলেন, ‘‘শিশুদের সাধারণত জোরালো করোনা সংক্রমণ খুব বেশি হয় না। তবে অনেক সময়ে বাচ্চাদের মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়অর্ডার হয়। অনেকে তা থেকে সুস্থও হচ্ছে। তবে বাড়িতে কারও কোভিড ধরা পড়ার পরে বাচ্চার যদি জ্বর হয়, তা হলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’ ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই রোগ থেকে বড় বিপদের ঝুঁকি থেকে যায় বলেও জানাচ্ছেন অসীমবাবু।

Advertisement

মঙ্গলবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ২১ মাস বয়সি ছেলের এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা লিখেছেন এক মা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, টানা তিন-চার দিন ধরে শিশুটির জ্বর আসছিল। চিকিৎসককে দেখিয়েও সারছিল না। শেষে তাকে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে জ্বরের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে গায়ে লাল চাকা দাগ দেখা দেয়। সারাক্ষণই ঝিমোচ্ছিল শিশুটি। ডেঙ্গি, টাইফয়েড, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া-সহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করার পরেও সব রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ছেলের কী হয়েছে, তা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন বাবা-মা। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে চিকিৎসক জানান, ওই শিশুটির কোভিড অ্যান্টিবডি অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, সে কাওয়াসাকির মতো রোগে আক্রান্ত। আট দিন ধরে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে শিশুটি।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুরা কোভিডে আক্রান্ত হলেও উপসর্গহীন হওয়ায় অনেক সময়ে তা বোঝা যায় না। এর ফলে তার শরীরে কোভিডের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেগুলি এতটাই শক্তিশালী হয় যে, দ্রুত শরীরের ভাল কোষগুলির মারাত্মক ক্ষতি করতে শুরু করে। জ্বরের পাশাপাশি চোখ লাল হতে পারে, গায়ে লাল র‌্যাশ বেরোতে পারে এবং পেটে-হাতে-পায়ে ব্যথা হতে পারে। শিশুরোগ চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাড়িতে কারও করোনা হওয়ার পরে শিশুর বেশ কয়েক দিন ধরে এমন উপসর্গ থাকলে প্রথমেই বুঝতে হবে, সেটি ‘মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়অর্ডার’-এর দিকে যাচ্ছে। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রথমেই চিকিৎসা শুরু করলে শিশুটি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।’’

চিকিৎসকেরা জানান, ওই রোগে আক্রান্ত শিশুকে স্টেরয়েড দেওয়ার পাশাপাশি ‘ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ঘন ওই তরল ১২ ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে শিশুটির শরীরে প্রবেশ করে। সুতরাং চিকিৎসকদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে শিশুর জ্বর থাকলে এবং সঙ্গে গায়ে র‌্যাশ বেরোলে তা উপেক্ষা না করাই ভাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement