অমান্য: নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এখন ভরসা এই দ্বিচক্রযান। গড়িয়াহাট এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ
গতিহারা শহর ক্রমশ ছন্দে ফিরছে। আর সেই সঙ্গে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পথে বাড়ছে সাইকেল, যা চিন্তায় রাখছে পুলিশকর্তাদের। কারণ, দুর্ঘটনা এড়াতে শহরের যে ৭০টি রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ ছিল, কোভিড পরিস্থিতিতে সেখানেও অবাধে চলছে ওই যান। তাই যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্তারা।
সাইকেল বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ছোঁয়াচ বাঁচাতে এবং গণপরিবহণ এড়াতে রাতারাতি বেড়েছে সাইকেল বিক্রি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবার, বিশ্ব সাইকেল দিবসে সবুজসাথী প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে টুইট করেছেন। সূত্রের খবর, এ দিনই সাইকেলের জন্য দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা লালবাজারকে জানিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। কয়েক দিনের মধ্যেই শহরে সাইকেল চালানো নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
২০০৮ সালে প্রথম শহরের ৩৮টি রাস্তায় ব্রাত্য করা হয় সাইকেলকে। পরে কলকাতা পুলিশের এলাকা বাড়লে সেই রাস্তার সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭৪। এই সিদ্ধান্তে সমালোচিত হয়ে ২০১৩ সালে নয়া সংশোধনীতে ৬২টি রাস্তা বাদ দিয়ে বাকি ১১২টি রাস্তায় ফের সাইকেল চালানোর অনুমতি দেয় পুলিশ। তবে ২০১৮ সালে আরও আটটি রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ হয়।
এত দিন ওই ‘নিষিদ্ধ’ রাস্তায় সাইকেল চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে ১০০ টাকা জরিমানা হত। বাজেয়াপ্ত হত সাইকেলটিও। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপাতত সেই কড়াকড়ি নেই। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, “মানবিকতার খাতিরে আপাতত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। জরিমানা করতেও বারণ করা হয়েছে। তবে সব রাস্তা থেকে সাইকেলের উপরে নিষেধাজ্ঞা একেবারে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে দুর্ঘটনা ঘটতে বাধ্য।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, “সাইকেলে আপত্তি নেই। শুধু নিষিদ্ধ রাস্তা দিয়ে না গেলেই ভাল।”
ট্র্যাফিক পুলিশ জানাচ্ছে, কোনও বড় রাস্তায় যানবাহনের ন্যূনতম গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার হওয়া প্রয়োজন। তার চেয়ে কম গতিসম্পন্ন যান (যেমন সাইকেল) ওই রাস্তায় চললে অন্য যানের গতিরুদ্ধ হওয়া এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা, দুই-ই থাকে। তাই বিকল্প লেনে ওই যান চালাতে দেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) তথা বর্তমান পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রতন দে বললেন, “কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তায় সাইকেল চালানোর বিকল্প লেন নেই। শহরের ঘিঞ্জি চরিত্রের জন্যই তা এখনও সম্ভব হয়নি।”
তবে কোভিড পরিস্থিতিতে সাইকেলে সম্পূর্ণ ছাড়ের পক্ষে সওয়াল করছেন অনেকে। সাইকেল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি সংগঠনের সদস্য সুবিমল কর্মকার বলেন, “বিকল্প রাস্তা নেই বলে তো মানুষ ভিড় বাসে যেতে পারেন না! সাইকেল চালানো বন্ধে পশ্চিমবঙ্গ মোটরযান আইনের ২৯২ ধারাকে ভুল ভাবে বহু দিন ব্যবহার করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি দেখিয়ে দিল, সাইকেলই মূল বিকল্প।” পঞ্চম দফা লকডাউনে কাজের জায়গায় যেতে সদ্য সাইকেল কেনা, গৌরীবাড়ির বাসিন্দা তন্ময় সাঁতরা বলছেন, “পুলিশও রাতে নজরদারি চালাতে সাইকেলে ঘোরে। শখ করে যে সাইকেলে বেরোচ্ছি না, এটা বুঝলে ভাল হয়। জরিমানার নিয়ম ফেরালে প্রতিবাদে রাস্তায় নামব।’’
আরও পড়ুন: আজ হঠাৎ উধাও হতে পারে ছায়া