— প্রতীকী চিত্র।
দীর্ঘ বহু বছর ধরে কোথাও বহুতল হেলে রয়েছে। কোথাও পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই মাথা তুলেছে একের পর এক বাড়ি। অভিযোগ রয়েছে পুকুর ভরাট করে নির্মাণেরও। বিটি রোড লাগোয়া পুর এলাকাগুলিতে এ হেন অনিয়ম এখন চেনা ছবি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, স্থানীয় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন খড়দহের খোদ শাসকদলের বিধায়ক তথা মন্ত্রী। যদিও বিটি রোড সংলগ্ন পুরসভার কর্তাদের দাবি, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কলকাতায় একের পর এক বহুতল-বিভ্রাটের পরেই কি টনক নড়ল উত্তর শহরতলির বিভিন্ন পুরসভার কর্তাদের? সদুত্তর নেই কারও কাছেই। বিরোধীদের অভিযোগ, সব কিছু দেখেও পুর কর্তৃপক্ষের চুপ করে থাকার মানসিকতাতেই কামারহাটি, পানিহাটি, বরাহনগর, খড়দহ পুর এলাকায় অসংখ্য বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। প্রকাশ্যে না বললেও ওই সমস্ত পুরসভায় শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ অভিযোগের আঙুল তুলছেন নিজেদের কিছু সতীর্থের বিরুদ্ধেই। যেখানে ‘সমঝোতা’র অভিযোগও বাদ যাচ্ছে না। তাই বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পুর আইন থাকলেও সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই রমরমিয়ে তৈরি হচ্ছে বহুতল। নিজেদের এলাকায় বেআইনি নির্মাণের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন কয়েক জন পুর কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার খড়দহের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনলাইন আবেদন ও পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করেই বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের অভিযোগ আসছে। পুকুর ভরাট রুখতে প্রায় প্রতিদিন হয় থানায়, নয়তো নগরপাল বা জেলাশাসককে ফোন করতে হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুরসভাকে ন্যায়ের পথে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু যে রাস্তায় দোতলা-তেতলার বেশি বাড়ি করা যায় না, সেখানে বলা হচ্ছে, আরও বেশি তল করে নাও। পরে জরিমানা দিয়ে দেবে।’’ এ হেন কাজে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি হচ্ছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। খড়দহ পুরসভায় শেষ কয়েক মাস ধরে বিল্ডিং কমিটির বৈঠক হয়নি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারপার্সন নীলু সরকার বলেন, ‘‘বেআইনি বহুতলের অভিযোগ পাইনি। অফলাইনে প্ল্যান পাশ হয় না। পুকুর ভরাট হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিধায়ক কেন এমন অভিযোগ করছেন, জানি না।’’
তবে, তাঁর এলাকার এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ডে সব থেকে বেশি বেআইনি নির্মাণ রয়েছে বলে স্বীকার করছেন কামারহাটি পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা। ইতিমধ্যে ৪৭টি বহুতলকে চিহ্নিত করে ভাঙার নোটিস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২টির প্রোমোটারের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। দু’-তিনটি বহুতল হেলেও গিয়েছে। অভিযোগ, ওই সাতটি ওয়ার্ড ছাড়াও বেশ কয়েকটি বহুতল তৈরি হয়েছে আইন না মেনেই। প্রশ্ন হল, এত দিন পুরসভা পদক্ষেপ করেনি কেন? গোপালের দাবি, ‘‘খবর পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভাঙতে গেলে বহুতলের মালিক আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন।’’ তা হলে তৈরির সময়ে নজরদারি করে না কেন পুরসভা? গোপাল বলেন, ‘‘একেবারে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তা নয়। তবে, এখন সব কিছু কড়া ভাবে দেখা হচ্ছে।’’
যদিও বরাহনগরে কত বেআইনি নির্মাণ রয়েছে, তার হিসাব পুরসভার কাছেও নেই বলে অভিযোগ। এমনও অভিযোগ, তেতলার অনুমতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ছয়-আটতলা। পুর চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের দাবি, ‘‘বেআইনি নির্মাণের উপরে কড়া নজরদারি রয়েছে। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
তাঁর পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ও নজরদারিতে খামতি, দুটোই মানছেন পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায়। দিনকয়েক আগেই আগরপাড়ার দেশবন্ধুনগরে নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বহুতলের উপরের অংশের বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলে গিয়ে খোদ মলয় দাবি করেছিলেন, পুর আইন মেনে ওই বহুতল তৈরি হয়নি। পাঁচতলাও তৈরি হয়েছে পুর অনুমোদন ছাড়া। শনিবার জানা যায়, পানিহাটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পানশিলায় পাঁচতলা দু’টি বহুতলের একটি অন্যটির গায়ে প্রায় ঠেকে রয়েছে। বছর দশেকের বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা। পানিহাটির অন্য়ত্রও বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ প্রচুর। মলয়ের দাবি, ‘‘খোঁজখবর নিচ্ছি। পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে।’’