—প্রতীকী চিত্র।
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যাকেও প্রতি বছর পিছনে ফেলছে কলকাতা শহরের পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বৈঠকে ট্র্যাফিক পরিস্থিতি উঠলেই সামনে আসে এই প্রসঙ্গ। মৃত্যু ঠেকাতে কী কী রোগ সারানো দরকার, সেই নিয়ে প্রতি বার আলোচনা হয়। ওষুধও জানা আছে বলে কর্তাদের সামনে মন্তব্য করেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ, তবুও পথচারীর মৃত্যুতে লাগাম টানা যায় না। বরং শোনা যায়, যেমন খুশি হকার বসার কারণেই মৃত্যু রোখা যাচ্ছে না। এমনকি, ‘হকার গ্রাস’ থেকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না মূল রাস্তার পাশের ‘সার্ভিস রোড’ও! শোনা যায়, লেনদেনের অন্য সমীকরণে জবরদখলের ব্যবসায় ফুটপাতের চেয়েও দর বেশি সার্ভিস রোডের।
কলকাতা পুলিশের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে কলকাতায় ৮০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে গাড়ি বা মোটরবাইকের ধাক্কায়। আহতের সংখ্যা সাড়ে চারশোর বেশি। দুর্ঘটনায় শয্যাশায়ী কারও কারও পরিবার পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কাজ কিছু হয়নি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবরদখল সরাতে কড়া বার্তা দেওয়ার পর পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় কিছুটা আশা দেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে সরকারের শীর্ষস্তর থেকে নরম মনোভাব সামনে আসায় তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘সার্ভিস রোডও দখল হওয়ায় মৃত্যু বাড়ছে। আর কবে সরকার কড়া হবে?’’
সার্ভিস রোড বিক্রির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ই এম বাইপাস লাগোয়া অংশে। এর পরেই রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার সংযুক্ত কিছু এলাকা। এর পর তালিকায় আছে লেক টাউন, সল্টলেক আর নিউ টাউনের সার্ভিস রোড। করুণ অবস্থা বাইপাসের রুবি মোড়ের দু’পাশের সার্ভিস রোডের। সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের পাশে সার্ভিস রোডেই পর পর পাকাপাকি দোকান করা হয়েছে। কোনওটির সামনে রাস্তার উপরেই চেয়ার-টেবিল পেতে ভাতের হোটেল চলছে। সেখানেই একটি পানের দোকানদার বললেন, ‘‘মোটা টাকায় স্টল কিনেছি আমরা। সার্ভিস রোডের ব্যবসার আলাদা গুরুত্ব। সেই কারণেই ফুটপাতের থেকে এই স্টলের দাম বেশি।’’
কত দাম? মুকুন্দপুরের কাছের আর একটি সার্ভিস রোডের দোকানদার বললেন, ‘‘একশো বর্গফুটের দোকান প্রায় ন’লক্ষ টাকা। অবস্থা বুঝে রেট দশ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।’’ অজয়নগরের আরেকটি সার্ভিস রোডে জবরদখল হয়ে এমন অবস্থা যে সেখান দিয়ে গাড়ি যাতায়াত তো দূর, মোটরবাইক চলারও উপায় নেই। সেখানকার দোকানির মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখানে সমস্তটা বিক্রি হয়নি। এখানকার এক দাদা পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মাথাপিছু দোকান দিয়েছেন। তার পরেও ভাড়া হিসাবে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে তাঁর ছেলেদের দিতে হয়। পুজোর সময়ে বা সভা-সমাবেশ হলে আলাদা চাঁদা।’’
দখল হওয়া রাস্তার দোকানের এত দাম? এখানকার দোকানিরাই বলেন, ই এম বাইপাসের মতো দ্রুত গতির রাস্তার ধারে দোকান দেওয়ার উপায় নেই। দ্রুত গতিতে যেতে হয় বলে কেউ যানবাহন থামিয়ে কিছু কিনবেন না। এই কারণেই গুরুত্ব বাড়ে সার্ভিস রোডের। এখানে গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে এসে কেনাকাটা করা যায়। এই ভাবনা থেকে এক সময়ে সার্ভিস রোডে হকার বসানো শুরু হলেও এখন পুরোটাই চলে গিয়েছে তাঁদের দখলে।
প্রতি বছর এমন রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও পুলিশ কেন কিছু করে না? লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তার দাবি, এমন ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৮৩ ধারায় (কিছু রেখে যানবাহনের গতি রুদ্ধ করা) মামলা করা যায়। কিন্তু জামিন যোগ্য ধারা হওয়ায় গ্রেফতারির পরে বেরিয়ে এসে ফের ব্যবসা শুরু করেন অনেকে।
(চলবে)