ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড। —ফাইল চিত্র।
ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরকরণের জন্য ন’বছর আগেই রাজ্য সরকারকে ওল্ড গরাগাছা রোডে প্রায় সাড়ে চার একর জমি দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ (কলকাতা বন্দর)। কিন্তু সেই জমিতে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তর করা তো দূর, তার যথাযথ ব্যবহারের কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি। ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড নিয়ে মামলার সূত্রে এমনই অভিযোগ করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড সরানো নিয়ে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। না হলে জমি থাকা সত্ত্বেও কেন তা নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে?
যদিও রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টকে জানিয়েছে, বাসস্ট্যান্ড নিয়ে সমীক্ষার জন্য রাইটসকে নিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে বহুতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এই সমীক্ষার জন্য চার সপ্তাহ সময় লাগবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার হাই কোর্ট জানিয়েছে, বাসস্ট্যান্ড নিয়ে কাজ কতটা এগোচ্ছে, তা সরকারকে ১৫ সেপ্টেম্বরে পরবর্তী শুনানির মধ্যে জানাতে হবে।
এই মামলাতেই কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের গাড়ি রাখার সমস্যার বিষয়টি উঠে আসে। হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়, সংলগ্ন এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি রয়েছে। সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই চত্বরে তাদের অব্যবহৃত জমি পড়ে রয়েছে কি না, তা জানাতে।
আর এই নির্দেশের সূত্রেই ন’বছর আগে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে অন্যত্র বাসস্ট্যান্ড করার জন্য রাজ্য সরকারকে বন্দরের তরফে দেওয়া জমির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। বন্দর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে হাই কোর্টের নির্দেশেই ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরকরণের প্রসঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে বন্দরের প্রতিনিধিও ছিলেন। তখনই ৩০ বছরের লিজ় চুক্তিতে রাজ্য সরকারকে ওল্ড গরাগাছা রোডে ওই জমি দিয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই সূত্রেই পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, হাতে জমি থাকা সত্ত্বেও কেন ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড সরানো হচ্ছে না? এর পিছনে কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে? মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, বন্দরের দেওয়া জায়গা সম্পূর্ণ অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে রাজ্য। উল্টে নতুন করে সমীক্ষা করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরোটাই চোখে ধুলো দেওয়া। সাড়ে চার একর জমি নির্দিষ্ট ভাবে বাসস্ট্যান্ড করার জন্য রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল বন্দর। তা হলে সেই জমি কেন ব্যবহার করা হল না? এর জবাবদিহি রাজ্যকে করতে হবে।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মতে, ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ধোঁয়া-দূষণ মাত্রাছাড়া। তা ছাড়া, পার্কিংয়ের অব্যবস্থা, যানজট, সব মিলিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সাড়ে চার একর জমি থাকা সত্ত্বেও তার ব্যবহার না করা আশ্চর্যের।’’ যদিও রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখতেই সমীক্ষা করা হচ্ছে।