—প্রতীকী চিত্র।
বিধি না মেনেই চলছে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করে খাবার বিক্রি। প্রশাসনের একাংশের দাবি, বহু দোকানের এ ভাবে ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রই নেই। স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, বার বার বারণ করা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা অগ্নি-সুরক্ষা মানার দিকটিতে গুরুত্ব দেন না।
এ ভাবেই চলছিল বছরের পর বছর। কিন্তু এই অপরিণামদর্শিতার ফল কী হতে পারে, বিধাননগর পুর এলাকার কেষ্টপুরে একটি খাবারের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনায় জখম এক ব্যক্তির মৃত্যু আবার পুরনো প্রশ্নকেই সামনে এনেছে। তা হল, ব্যবসায়ীরা সচেতন হবেন কবে? পাশাপাশি, একটি মৃত্যুর পরেও কি কঠোর পদক্ষেপ করতে সচেষ্ট হবে পুরসভা?
গত ২১ ডিসেম্বর কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লি বাজারে একটি খাবারের দোকানে প্রথমে আগুন লাগে। দোকানটি তখন বন্ধ ছিল। আশপাশের দোকানদারেরা জিনিসপত্র সরানোর ফাঁকে বিকট শব্দে ফাটে গ্যাস সিলিন্ডার। সেই আগুনের গোলায় পথচারী, মোটরবাইক-আরোহী সহ মোট ২৩ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে ৯ জনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মারা যান জয় সাহা নামে তাঁদেরই এক জন। ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গ্যারাজের মালিক ছিলেন তিনি। মৃতের পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও মেয়ে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরে এক সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও সে ভাবে প্রশাসনিক কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি মণীশ মুখোপাধ্যায় জানান, যে ভাবে অগ্নি-বিধি না মেনে রান্না করে খাবার বিক্রি চলছে, তার বিরুদ্ধে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এর পরেও কেন কোনও পদক্ষেপ করা হল না?
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দোকানদারেরা যাতে অগ্নি-বিধি মেনে ব্যবসা করেন, সে ব্যাপারে তাঁদের একাধিক বার সতর্ক করা হয়েছে। বিধি না মানলে পাঠানো হয়েছে নোটিসও। তার পরেও ব্যবসায়ীদের একাংশ বিষয়টিতে আমল দেননি। মেয়র স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই সব দোকানের বৈধ অনুমতিও নেই। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ বার এই ধরনের দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
শুধু তা-ই নয়, যে দোকানে আগুন লেগেছিল, তার মালিক কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছিলেন বাসিন্দারা। ঘটনার আট দিন পরেও কৃষ্ণর খোঁজ মেলেনি। বিধাননগর কমিশনারেটের উপ-নগরপাল (বিমানবন্দর) ঐশ্বর্যা জানান, ওই ব্যক্তির খোঁজ চলছে। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই ব্যক্তি সম্ভবত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। সাধারণ ফোন ব্যবহার করেন। যে কারণে তাঁর খোঁজ পেতে সমস্যা হচ্ছে।
বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভা পরিচালিত বাজারগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে রান্না বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগেও পুর প্রশাসনের মুখে এমন প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। তবে এ বার একটি প্রাণের বিনিময়ে পুরসভা সদর্থক কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটে কি না, সে দিকেই তাঁরা তাকিয়ে।