—প্রতীকী চিত্র।
হোর্ডিং সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়ায় বিধাননগর পুরসভার বিরুদ্ধে নালিশ ঠোকা হল রাজ্য তথ্য কমিশনের কাছে। বিধাননগরে হোর্ডিংয়ের সংখ্যা কত, কী ভাবে হোর্ডিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়, ব্যবসায়িক স্বার্থে কত হোর্ডিং ভাড়া দেওয়া হয়— তথ্য জানার আইনে (আরটিআই) বিধাননগর পুরসভার কাছে এমনই একাধিক বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন এক আইনজীবী। অভিযোগ, পর পর দু’বার আবেদন করা সত্ত্বেও পুরসভা সেই তথ্য ওই আইনজীবীকে দেয়নি। এর পরেই ওই আইনজীবী রাজ্য তথ্য কমিশনের কাছে নালিশ ঠুকেছেন।
বেআইনি হোর্ডিংয়ের রমরমা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিধাননগর পুরসভার ভূমিকা। পুর কর্তৃপক্ষ বেআইনি হোর্ডিং রাখার পক্ষপাতী নন বলে দাবি করলেও ওই ধরনের হোর্ডিংয়েই ছেয়ে গিয়েছে বিধাননগর পুর এলাকা, অভিযোগ এমনই। এক জায়গা থেকে অবৈধ হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হলে অন্যত্র নতুন অবৈধ হোর্ডিং লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেই সব হোর্ডিং থেকে এক টাকাও রাজস্ব আদায় হয় না পুরসভার।
হোর্ডিংয়ের কাঠামো বিপজ্জনক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিধাননগর পুর এলাকার বহু জায়গায়। সল্টলেক, ভিআইপি রোড, ইএম বাইপাস, চিনার পার্কের মতো এলাকায় এই সমস্ত হোর্ডিং চোখে পড়বে। এমনকি, সরকারি জায়গায় ইউনিপোল তৈরি করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই অভিযোগ, স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের একাংশের মদতেই বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং বসানোর সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এমনই পরিস্থিতিতে রাজ্য তথ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন দিব্যায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই আইনজীবী। গত ৮ এপ্রিল তিনি কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান, গত ডিসেম্বরে এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি হোর্ডিং সংক্রান্ত কিছু তথ্য বিধাননগর পুরসভার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরসভা কোনও উত্তর দেয়নি বলেই অভিযোগ ওই আইনজীবীর।
কমিশন সূত্রের খবর, কত হোর্ডিংয়ের অনুমতি পুরসভা দিয়েছে, হোর্ডিং দেওয়ার কী নীতি, কতগুলি হোর্ডিং বিধাননগর পুর এলাকায় রয়েছে, সেগুলি কোথায় কোথায় রয়েছে, তা থেকে কত রাজস্ব আসছে, এ হেন কিছু প্রশ্ন দিব্যায়ন জানতে চেয়েছিলেন। তিনি জানান, তাঁরা বিধাননগর পুর এলাকায় ঘুরে আইনি এবং বেআইনি, সব ধরনের হোর্ডিং নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছেন। তাতে বিধাননগরে ৭০০টি হোর্ডিংয়ের খোঁজ মিলেছে। দিব্যায়ন বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিধাননগরে বৈধ হোর্ডিংয়ের সংখ্যা অনেক কম। তার মানে সমীক্ষায় পাওয়া হোর্ডিংয়ের সিংহভাগই বেআইনি। সেই সমস্ত হোর্ডিং থেকে পুরসভা আয় করলে সেই রাজস্ব পুর পরিষেবার কাজে বরাদ্দ করা যাবে। টাকার অভাবে পুর পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা কমবে।’’
চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে বিধাননগর পুরসভা হোর্ডিং থেকে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। সেই ঘোষণা নিয়ে পুর মহলেরই একাংশ প্রশ্ন তুলেছিল। সেই মহলের দাবি, বিধাননগরে পুরসভার অনুমতিপ্রাপ্ত হোর্ডিংয়ের সংখ্যা ১৩০টি। সেখান থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা রোজগারের সম্ভাবনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এত কমিয়ে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই।
যদিও আরটিআই-এর উত্তর কেন দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘তথ্য জানার অধিকার আইনে কেউ কিছু জানতে চাইলে, তা জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। তবে, আমরাও বেআইনি হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছি। তা নিয়ে ভাবনাচিন্তাও চলছে।’’ ওই আইনজীবী জানান, তাঁরা রাজ্য তথ্য কমিশনের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে সুরাহা না পেলে পরবর্তী পর্যায়ে একই আবেদন রাখবেন। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।