—প্রতীকী চিত্র।
এক জন রয়েছেন স্টেডিয়ামের ভিতরে। ফোনে স্টেডিয়ামে বসা সেই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন হোটেলে বসে থাকা আর এক জন। স্টেডিয়ামের যুবক হোটেলের যুবককে খেলার প্রতি বলের খবর জানিয়ে দিচ্ছেন। কোন বলে কত রান হচ্ছে থেকে শুরু করে কে বল করতে আসছেন, সব তথ্যই জানা যাচ্ছে ফোনে। টিভিতে দেখানোর কয়েক সেকেন্ড আগে এ ভাবেই তথ্য জেনে হোটেলে বসে বেটিং-চক্র চালাচ্ছিলেন অন্য যুবক।
এক বছর আগে ইডেনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা চলাকালীন অনলাইন বেটিংয়ের এমনই একটি চক্রের হদিস পেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। তদন্তে নেমে চক্রের কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছিল লালবাজার। স্টেডিয়ামে খেলা এবং টিভিতে সম্প্রচারের মধ্যেকার কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানের সুযোগ নিয়েই যে বেটিং-চক্রের জাল বিস্তৃত, সেই আন্দাজ প্রাথমিক তদন্তেই পেয়েছিল পুলিশ। বিশ্বকাপের পরে আইপিএল ঘিরে শহরে ক্রিকেট উন্মাদনা শুরু হতেই ফের বেটিং-চক্রীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে বলে খবর। যার আভাস মিলেছে দিন তিনেক আগে, ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা-হায়দরাবাদ ম্যাচের আগে দুই যুবকের গ্রেফতারির ঘটনায়।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইডেনে আইপিএলের প্রথম ম্যাচের আগে পোস্তা থানা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বেটিং চালানোর অভিযোগে অনিল পোদ্দার এবং অমিত দামানি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা মোবাইলে একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বেটিং-চক্র চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ।
কী ভাবে চলে এই অনলাইন চক্র? সূত্রের খবর, বেটিংয়ের জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহার করে কারবারিরা। নির্দিষ্ট সেই অ্যাপ সাধারণত প্লে-স্টোরে না মিললেও টাকা দিলেই লিঙ্ক-সহ ‘আইডি’ হাতের নাগালে এসে যায়। এ বার আইডি ব্যবহার করে চলে বেটিংয়ে অংশ নেওয়া। আরও খবর, এই বছর একটি মেসেজিং সাইটকেও কারবারিরা ব্যবহার করছে। সেখানে গ্রুপ করে খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে সক্রিয় হচ্ছে তারা। এমনকি, এই চক্রের মাথাদের ভিন্ দেশে বসে থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশকর্তাদের একাংশ।
জানা গিয়েছে, খেলার শুরু ও শেষ, খেলার সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে চালানো হচ্ছে বেটিং-চক্র। ম্যাচের ফলাফলের পাশাপাশি টসে কে জিতবে, শেষ ছয় ওভারে কত রান উঠবে, সেরা খেলোয়াড় কে নির্বাচিত হবেন— নানা বিষয় নিয়ে থাকছে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দর হাঁকানোর সুযোগ। এ ছাড়া, খেলা শুরু হলে কোন বলে কত রান উঠবে, তা নিয়েও বেটিং চলছে। স্টেডিয়ামের ভিতরেও চক্রীদের একাংশ সক্রিয় থাকছে বলে খবর।
লালবাজার যদিও আইপিএলের উন্মাদনার মধ্যে শহরে বেটিংয়ের জাল যাতে কোনও ভাবে সক্রিয় না হয়, তার জন্য নজরদারি চলছে বলে জানাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ দলকেও অনলাইন বেটিং নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকি, ইডেনে ম্যাচের সময়ে সাদা পোশাকেও স্টেডিয়ামের ভিতরে পুলিশি নজর থাকছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অনলাইনে এই বেটিং রুখতে একাধিক মাধ্যমকে কাজে লাগানো হয়েছে। সাইবার বিভাগও নজরদারি চালাচ্ছে।’’