বাসের জন্য অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
এক দিকে ‘সিত্রাং’-এর ভ্রুকুটি। অন্য দিকে কালীপুজো-ভাইফোঁটা-ছটপুজো উপলক্ষে লম্বা ছুটি। এই দুইয়ের জেরে সপ্তাহভর উৎসবের মরসুমে রাস্তায় গণপরিবহণের অভাবে ভোগান্তির মুখে পড়লেন যাত্রীরা। সকালের দিকে পথে বাস থাকলেও বিকেল হতেই উধাও হয়ে গিয়েছে বাস। ফলে চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। ভাইফোঁটার দিনেও যা থেকে নিস্তার পেলেন না শহরবাসী।
বাসমালিকদের একাংশের যদিও বক্তব্য, ‘‘বাসকর্মীদের পাশাপাশি সপ্তাহভর রাস্তায় যাত্রীরও অভাব ছিল। ফাঁকা বাস চালিয়ে লোকসান করতে কে আর চাইবে?’’ তবে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, গণপরিবহণের এই ভোগান্তি শুরু হয়েছে সিত্রাং-এর আগে থেকেই। শহরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রুটে নির্ধারিত বাসের সংখ্যা কোথাও অর্ধেক, কোথাও বা তার থেকেও কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে সপ্তাহভর উৎসবের মরসুমে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। সকালের দিকে বাসের অপেক্ষায় গড়ে আধ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় দাঁড়াতে হয়েছে। বিকেলের পর থেকে সেই অপেক্ষার সময় বেড়েছে আরও অনেকটাই। ফলে নিরুপায় হয়ে বহু যাত্রী বেশি খরচ করে বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছেন। একই সমস্যা দূরপাল্লার বাসেও। জানা গিয়েছে, শহর এবং শহরতলির ১৩, ৪৮, ১৮, ৭৭, ৪৫, ২৩৯-সহ একাধিক রুটে বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কোথাও ৬০টি বাসের মধ্যে সপ্তাহভর পথে নেমেছে মাত্র ৩০টি বাস। কোনও রুটে আবার ৭০টির মধ্যে পথে চাকা গড়িয়েছে ৪০টিরও কম বাসের।
যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, গণপরিবহণে ভোগান্তি বেশি বাড়ছে বিকেলের পর থেকে। সন্ধ্যার পরে বহু রুটে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরেও বাসের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ। বজবজের রুমা পাল বললেন, ‘‘বাসের জন্য গত কয়েক দিন অফিস থেকে আগে আগে বেরোচ্ছি। যা অবস্থা, তাতে কপাল ভাল থাকলে ঘণ্টাখানেক পরে একটা বাস মিলছে।’’ বিরাটি থেকে কসবায় অফিসে যাওয়া বিজয় আচার্যও বলছেন, ‘‘সকালের দিকে যা-ও বা বাস মিলছে, বিকেল হতে না হতেই সব উধাও। আর রাত বাড়লে তো বাসের দেখা পাওয়া আর ভগবানের দেখা পাওয়া, দুই-ই কার্যত সমান ব্যাপার!’’
বাসমালিকদের একাংশের অবশ্য দাবি, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর আশঙ্কায় অনেক বাসকর্মীই ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। তার পরেই কালীপুজো এবং ভাইফোঁটা থাকায় এখনও অনেকেই কাজে যোগ দেননি। এর সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের পরিযায়ী বাসকর্মীদের একটি বড় অংশ ছটপুজোর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছেন। ফলে ইচ্ছে থাকলেও রাস্তায় বাস নামানো যাচ্ছে না বলে দাবি বাসমালিকদের একাংশের।
তাঁদের আরও বক্তব্য, এই সময়ে অফিস-সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে। তাই যাত্রী-সংখ্যাও তুলনায় কম থাকে। পথে বাস নামালেও কম যাত্রী নিয়েই দৌড়তে হয়। তাই লোকসান বৃদ্ধির আশঙ্কায় অনেক মালিকই এই সময়ে বাস পথে নামাতে চান না। কেউ কেউ আবার এই সময়েই বাসের মেরামতি করেন।
তবে আগামী সপ্তাহ থেকেই বাসের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে বলেই আশ্বস্ত করছেন বাসমালিকদের একাংশ। সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহা বললেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে যে এই সমস্যা রয়েছে, এটা ঠিক। এই সময়ে যাত্রীও কম, ফলে বাসও কম থাকে। পরিযায়ী বাসকর্মীরাও বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ছুটিতে রয়েছেন। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই সমস্যা মিটে যাবে।’’ অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কালীপুজো, ভাইফোঁটা, ছট— এই তিন জটে গণপরিবহণের ভোগান্তি বেড়েছে। কর্মীর অভাবেই বাস দাঁড়িয়ে পড়েছে। তা ছাড়া, এই সময়ে যাত্রী-সংখ্যাও কম থাকে বলে অনেকেই পথে বাস নামিয়ে লোকসানের বোঝা আর বাড়াতে চাইছেন না।’’