২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পরে পুলিশ, পুরসভা, সিইএসসি ও দমকলের আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি শহরের বিভিন্ন বাজারগুলিকে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ছ’মাস সময় দেয়। বলা হয়েছিল, সরকারি নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফাইল চিত্র।
আগুন লাগার পরে কমিটি গঠনই সার! নন্দরাম মার্কেট, স্টিফেন কোর্ট থেকে শুরু করে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল বা শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেট— গত কয়েক বছরে শহরে একাধিক বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারি তরফে কমিটি গঠিত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখাই ওই সব কমিটি গড়ার মূল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু অভিযোগ, কমিটি কেবল গড়াই হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা রয়ে গিয়েছে স্রেফ খাতায়কলমে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কমিটি সুপারিশ করলেও সেগুলি বাস্তবায়িত হয়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় ট্যাংরার মেহের আলি লেনে একটি রেক্সিনের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে রবিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে পুরসভা, পুলিশ ও দমকলকে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়র জানিয়েছেন, শহরের কোথায়, কত সংখ্যক গুদাম রয়েছে এবং সেই সমস্ত গুদামে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, অতীতে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের তরফে কমিটি গঠনের ‘পরিণতি’ই ফের নতুন কমিটির কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হবে না তো?
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু সোমবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন কমিটি তৈরির কথা বলেছেন, তখন সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’’ তবে সব জায়গায় গিয়ে দমকলের অডিট করা যে এখনও সম্ভব হয়নি, সেই খামতির কথাও স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘এত বড় শহরে কে, কোথায় অনিয়ম করছে, তা আমাদের পক্ষে খুঁজে বার করা অসম্ভব। তবুও দমকল কাজ করছে। দমকলের এত কর্মী নেই যে বিশাল শহরের সর্বত্র অগ্নি-সুরক্ষার উপরে নজরদারি করা যাবে। মানুষকেই সচেতন হতে হবে।’’
দমকলের প্রাক্তন উপ-অধিকর্তা উদয়নারায়ণ অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘গত কয়েক বছরে শহরে একাধিক বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাম-কা-ওয়াস্তে কমিটি গঠিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কমিটি কিছু সুপারিশ করলেও তা রয়ে গিয়েছে খাতায়কলমে।’’ উদয়বাবু বলেন, ‘‘কেবল কমিটি গঠন করলেই হবে না। দীর্ঘদিন ধরে দমকলে কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় গোড়ায় গলদ রয়ে গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফায়ার লাইসেন্স থেকে শুরু করে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ২০০৩ সালে তৎকালীন বাম সরকারের তরফে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ফায়ার অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার জন্য বিধানসভায় আইনও পাশ হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত সেই কাজ শুরু হয়নি।’’ দমকলের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেবল কমিটি গঠন করলে রোগ সারবে না। কমিটির সুপারিশ মেনে চলতে সরকারকে লাগাতার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ফায়ার অডিট করতে আলাদা সংস্থা নিয়োগ করা প্রয়োজন।’’ বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ফায়ার অডিটের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দমকলমন্ত্রী।
২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পরে পুলিশ, পুরসভা, সিইএসসি ও দমকলের আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি শহরের বিভিন্ন বাজারগুলিকে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ছ’মাস সময় দেয়। বলা হয়েছিল, সরকারি নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহরের বেশির ভাগ বাজারের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। একই ভাবে ২০১০ সালে পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের পরে সরকারি তরফে কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ, ‘‘আমরা দেখেছিলাম, আগের কমিটিগুলির সুপারিশ ঠিক মতো মানা হয়নি। যেমন, ২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে গঠিত কমিটি বাজারগুলির অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে একাধিক সুপারিশ করলেও বেশির ভাগ বাজারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাই ছিল না।’’ ২০১১ সালে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুনের পরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির অগ্নি-সুরক্ষা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠিত হয়েছিল। দমকলের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখনও একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নি-সুরক্ষায় বহু খামতি রয়েছে। সেগুলি মেটাতে সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে।’’