শুক্রবার কলকাতা পুরসভার তরফে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা করা হয়নি। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হতে পারে। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা পুরসভা এলাকায় রাস্তার পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা জানিয়ে দিল তৃণমূল! এ জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় টুইট করে তারা কলকাতা পুরসভাকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। তবে কলকাতা পুরসভার তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা করা হয়নি। নীরব রয়েছেন কলকাতার পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। পুরসভা সূত্রে খবর, শুক্রবার ‘গুড ফ্রাইডে’ উপলক্ষে সরকারি ছুটির কারণে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হতে পারে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়রের কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘বিতর্ক’ না বাড়িয়ে বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহার করে নিতে। তার পরেই মেয়র ফিরহাদ বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহার করার নির্দেশ মেনে নিয়েছেন।
কিন্তু মেয়র বা পুরসভার পরিবর্তে দলের তরফে কেন এমন ঘোষণা করা হল? এই প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং কেন পুরসভা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, তা বলতে পারব না। হয়তো কোনও নিয়মের কারণে আটকে থাকতে পারে।’’
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হলেও দুপুরের পর পুরসভার পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে হাওয়া কিঞ্চিৎ তপ্ত হয়ে ওঠে। দলের মুখপাত্র কুণাল সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অগোচরে’ পার্কিং ফি বাড়ানো হয়েছিল। তিনি কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন ওই বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করে পুরনো হারেই পার্কিং ফি নিতে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের উপর ‘বাড়তি বোঝা’ চাপাতে চান না। সেটা তৃণমূলের নীতি নয়। কুণাল আরও দাবি করেন, শুক্রবারের মধ্যেই ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
তার অব্যবহিত পরেই আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে মেয়রের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বললে ওই সিদ্ধান্ত আমি প্রত্যাহার করে নেব। বর্ধিত পার্কিং ফি-ও তুলে নেব। কিন্তু সেটা আমায় মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারতেন। দলের ভিতরেও বলা যেত। এ ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রকাশ্যে না বললেই ভাল হত।’’ অর্থাৎ, মেয়র তখনও মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও নির্দেশ পাননি। মেয়রের ঘনিষ্ঠেরাও দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী তখনও মেয়রকে তেমন কোনও নির্দেশ দেননি। একইসঙ্গে তাঁরা এ-ও স্বীকার করে নেন যে, ফি বৃদ্ধির আগে মেয়রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও আলোচনা হয়নি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়। তিনি মেয়রকে নির্দেশ দেন, ‘বিতর্ক’ না বাড়িয়ে বর্ধিত পার্কিং ফি সংক্রান্ত নির্দেশটি ফিরিয়ে নিতে। ফিরহাদ আগেই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী বললে তিনি নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেবেন। সেইমতোই তিনি সিদ্ধান্ত নেন। তবে ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাটি শুক্রবার দেওয়া যায়নি।
যে কোনও সরকারি নির্দেশ প্রত্যাহার করাতে গেলে সরকারি ভাবে আরও একটি নির্দেশ দিতে হয়। মেয়রের ঘনিষ্ঠেরা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ওই প্রয়োজনীয় নির্দেশটি দেওয়া যায়নি। শনিবার পুরসভা খুললে সেটা করা যাবে। তবে তৃণমূল তত বিলম্ব করতে রাজি হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দলের অফিশিয়াল টুইটার পেজে তৃণমূল জানায়, ‘কলকাতায় পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য কলকাতা পুরসভাকে ধন্যবাদ জানাই। এই কঠিন সময়ে রাজ্য সরকার বা কলকাতা পুরসভা মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চাপাতে চায় না। মানুষের পক্ষে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। আপনাদের মঙ্গল এবং কল্যাণই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার!’
তৃণমূলের ওই টুইটের পর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য জানান, শনিবার প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে।