আদানি গোষ্ঠীকে বাঁচাতে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক বিক্রি করে দিচ্ছে মোদী সরকার, আক্রমণ মমতার। ছবি— পিটিআই।
শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাকে বাঁচাতে কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা জীবনবিমা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক বিক্রি করে দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার। আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে দু’দিনের ধর্নার শেষ দিন, বৃহস্পতিবার এমনই অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের মোদী সরকারকে আবার ‘নন্দলাল’ বলে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘কেয়া নন্দলাল, এলআইসি কো বেচ দিয়া আদানিকে লিয়ে?’’
গত মঙ্গলবার রাজ্যের পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের সূচনা করতে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন হুগলির সিঙ্গুরে। সেখানে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রের মোদী সরকারকে অভিনব কায়দায় আক্রমণ করেছিলেন মমতা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার পাতা থেকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন ‘নন্দলাল’কে। ওই নামের আড়ালে যে তিনি আসলে মোদী সরকারকেই আক্রমণ করছেন, তা সহজেই বুঝিয়েও দিয়েছিলেন মমতা। বৃহস্পতিবারেও সেই ‘নন্দলাল কটাক্ষ’ ফিরল মমতার গলায়। সিঙ্গুরে মমতা নন্দলালকে কটাক্ষ করেছিলেন আকাশছোঁয়া গ্যাসের দাম নিয়ে। যা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বৃহস্পতিবারও মমতা মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন সেই ‘আম আদমি’র বিষয় নিয়েই। তাতে কোথাও মমতার উদ্বেগ ধরা পড়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা নিয়ে আবার কোথাও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে জীবনবিমা এবং ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ। মমতা বলেন, ‘‘ওহে নন্দলাল, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেবেন না? কি নন্দলাল, আদানির জন্য এলআইসিকে বিক্রি করে দিলেন! মূল্য চোকাবে কে? বলুন নন্দলাল, স্টেট ব্যাঙ্কও বিক্রি করে দিলেন? মূল্য চোকাবে কে?’’
গত জানুয়ারিতে আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ভারতের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দামে ব্যাপক পতন দেখা যায়। এক এক দিনে উবে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে ‘হাতিয়ার’ করে সরাসরি মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে গলা চড়াতে শুরু করে কংগ্রেস। তাতে গলা মেলায় বামেরাও। শেয়ার বাজারে আদানির শেয়ারের দাম যত কমেছে, ততই প্রবল হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আক্রমণ। যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে আদানিকাণ্ডে তদন্তের দাবি এখনও মানেনি সরকার। এর মধ্যেই জাতীয় রাজনীতির বিরোধী পরিসরে এসেছে বড়সড় বদল। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছে। তার পরেই রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। শুরুর দিকে আদানি গোষ্ঠী নিয়ে তৃণমূল সরাসরি বিশেষ কথা না বললেও ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে আদানির গ্রেফতার দাবি করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন তৃণমূল সাংসদেরা। মোদীর সঙ্গে আদানির ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে লাগাতার আক্রমণ শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রীও। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আদানি নিয়ে মোদীকে এ যাবৎ সবচেয়ে ক্ষুরধার আক্রমণে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদী সরকার সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা জীবনবিমা এবং স্টেট ব্যাঙ্কের টাকা আদানি গোষ্ঠীকে ‘বাঁচাতে’ ব্যবহার করছে বলে দাবি করলেন তিনি। সঙ্গে জুড়ে দিলেন বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক ‘বঞ্চনা’র বিষয়টিও।