তিন পক্ষের ভিন্ন বয়ান, শিকেয় ডেঙ্গি প্রতিরোধ

ডেঙ্গি রুখতে তালাবন্ধ বাড়ির বিপদ নতুন কিছু নয়। শহরের একাধিক তালাবন্ধ বাড়ি ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বড় মাথাব্যথার কারণ পুর প্রশাসনের কাছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০২
Share:

অস্বাস্থ্যকর: চার নম্বর চন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বিপজ্জনক বাড়িটির দরজায় তালা দেওয়া। ভিতরে আগাছার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

তালাবন্ধ বাড়ি হয়ে উঠেছে ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর। এই আতঙ্কে গত চার বছর ধরে পুরসভায় চিঠি লিখছেন প্রতিবেশীরা। ওই বাড়ির ভাড়াটেদের আবার অভিযোগ, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা এলেও মশাদমনের কোনও কাজ না করেই চলে যান। যা শুনে পুর প্রতিনিধির পাল্টা বক্তব্য, পুরকর্মীরা কাজ না করলে ওই ভাড়াটেরা খাতায় সই কেন করেন! ভবানীপুরে দরজায় তালা দিয়ে রাখা বিপজ্জনক ওই বাড়িটিতে আপাতত ডেঙ্গি প্রতিরোধের চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে এই তিন পক্ষের ‘তরজা’ই।

Advertisement

ডেঙ্গি রুখতে তালাবন্ধ বাড়ির বিপদ নতুন কিছু নয়। শহরের একাধিক তালাবন্ধ বাড়ি ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বড় মাথাব্যথার কারণ পুর প্রশাসনের কাছে। কিন্তু ভবানীপুরের চার নম্বর চন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের তালাবন্ধ বাড়িটি অবশ্য এতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। সংশ্লিষ্ট ওই বাড়িটি শুধু বিপজ্জনকই নয়, পরিণত হয়েছে মশার আঁতুড়ঘরও। যে আতঙ্কে বাড়িটির প্রতিবেশীরা গত চার বছর ধরে পুরসভায় চিঠি লিখছেন। কিন্তু তার পরেও কোনও কাজ হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। আবার বাড়িটির ভাড়াটেদের অভিযোগ, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা আসেন, কিন্তু মশা দমনের কাজ না করেই শুধুমাত্র খাতায় সই করিয়ে নিয়ে চলে যান! যার প্রেক্ষিতে আবার স্থানীয় কাউন্সিলরের বক্তব্য, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ না করলে ভাড়াটেরা খাতায় সই করেন কেন! ফলে তিন পক্ষের তিন রকম বয়ানের জেরে পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ওই বাড়িটির প্রধান দরজায় তালা দেওয়া। ভিতরে আগাছার জঙ্গল। দীর্ঘ দিন যে তা পরিষ্কার করা হয় না, তা দেখেই বোঝা যায়। বিপজ্জনক বোর্ড ঝোলানো বাড়িটির বিভিন্ন জায়গা থেকে নেমে এসেছে গাছের ঝুড়ি। দেওয়ালের ফাটলে জন্মেছে গাছ। এক প্রতিবেশী সুপর্ণা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এখন ডেঙ্গির মরসুমে ওই বাড়ির ভিতরে যা অবস্থা, তাতে যে কোনও দিন আমাদেরও ডেঙ্গি হতে পারে। পুরসভার বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি। তার পরেও কোনও সুরাহা হয়নি।’’

Advertisement

বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন দু’টি পরিবার। কেন দরজায় তালা দিয়ে রাখেন তাঁরা? এক ভাড়াটে হরদীপ সিংহ জানালেন, তালা না দিলে বহিরাগতেরা ঢুকে পড়েন। নেশাড়ুরা জিনিসপত্র চুরি করে পালায়। তাই বাড়ির মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই দরজায় তালা দিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু পুরসভার কর্মীদের কার্ড দেখেও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় না কেন? হরদীপের উত্তর— ‘‘পুরসভার কর্মীরা এসে কিছুই করেন না। মশা মারার তেলও দেন না, অন্য কিছুও করেন না। শুধু খাতায় সই করিয়ে চলে যান।’’ তবে পুরকর্মীরা যে কাজের কাজ কিছু করেন না, সেই অভিযোগ অবশ্য তাঁরা কাউন্সিলরকে জানাননি বলেই জানিয়েছেন হরদীপ।

সংশ্লিষ্ট বাড়িটি পুরসভার ৭১ নম্বর ওয়ার্ড এবং নয় নম্বর বরোর অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাপিয়া সিংহ বাড়িটির অবস্থা সম্পর্কে জানলেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেননি? বিশেষ করে এই ডেঙ্গির মরসুমে? পাপিয়ার বক্তব্য, ‘‘বাড়িটি তো তালাবন্ধ থাকে। কী ব্যবস্থা নেব! আর পুরসভার কর্মীরা কাজ না করলে ভাড়াটেরাই বা খাতায় সই করেন কেন? আমি তো দেখি খাতায় সই করা আছে।’’ পিছনের দিক দিয়ে বাড়িটিতে ঢোকার রাস্তা আছে এ কথা জেনে পাপিয়া বলেন, ‘‘মঙ্গলবারই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গিয়ে এলাকা সাফাই করব।’’ নয় নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রতন মালাকার বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই বরো বৈঠকে বন্ধ এবং বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে। বিষয়টির সমাধান কী ভাবে করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement