Suicide

পাশ করো আগে, তার পর মডেলিং, বাবা-মার শাসনে আত্মঘাতী কলকাতার নামী স্কুলের ছাত্রী!

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রিকশা থেকে নেমে ওই কিশোরী ব্যাগ, মোবাইল দিঘির পাড়ে রেখে জলে ঝাঁপ দেয়। ও ভাবে একটি মেয়েকে জলে ঝাঁপ দিতে দেখে স্থানীয় এক মহিলা চিৎকার করে লোক ডাকেন। কিন্তু তত ক্ষণে তলিয়ে গিয়েছে সুমেধার দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:১৩
Share:

ফের অভিমানে আত্মঘাতী স্কুলপড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

টিউশন নেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু রানিকুঠির বাড়িতে আর ফেরেনি দক্ষিণ কলকাতার নামী স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুমেধা বসু। শুক্রবার রাতেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয় রানিকুঠিরই একটি দিঘি থেকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ‘অভিমানে’ ওই দিঘির জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বছর সতেরোর ওই ছাত্রী। বিনোদন জগতের হাতছানিতে বাবা-মা বাধ সেধেছিল। সেই ‘অভিমান’ই সুমেধার প্রাণ কাড়ল বলে মনে করছেন তার বাবা-মা।

Advertisement

রানিকুঠি এলাকার কেএম নগরের বাসিন্দা সুমেধার বাবা স্বপন বসু পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, মডেল হওয়ার ইচ্ছে ছিল মেয়ের। কিন্তু তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই মেয়েকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, উচ্চমাধ্যমিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সব ভাবা যাবে না। এ নিয়ে বাবার সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা কাটাকাটিও হয়েছে। সেই ‘অভিমানেই’ সুমেধা আত্মঘাতী হয়েছে বলেই বসু দম্পতির ধারণা। পুলিশকেও তাঁরা তেমনটাই জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে টিউশন নেওয়ার নাম করে সুমেধা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশা ধরেছিল। মাঝপথে সে রানিদিঘির কাছে নেমে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রিকশা থেকে নেমে ওই কিশোরী ব্যাগ, মোবাইল দিঘির পাড়ে রেখে জলে ঝাঁপ দেয়। ও ভাবে একটি মেয়েকে জলে ঝাঁপ দিতে দেখে স্থানীয় এক মহিলা চিৎকার করে লোক ডাকেন। কিন্তু তত ক্ষণে তলিয়ে গিয়েছে সুমেধার দেহ। স্থানীয়রা কোনও ভাবে উদ্ধার করতে না পেরে পুলিশে খবর দেন। বেশ কিছু ক্ষণ পর কলকাতা পুলিশের উদ্ধারকারী দল এসে ডুবন্ত ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাঙুর হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:সন্ধ্যায় অজিতকে এনসিপি থেকে বহিষ্কার? এত বড় প্রতারণার শিকার হইনি, বার্তা সুপ্রিয়া সুলের
আরও পড়ুন:খেলায় দুরন্ত,পড়াশোনায় নয় কেন! বাড়ির গঞ্জনায় আত্মঘাতী বাঘাযতীনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র

রানিদিঘির পাড়ে ফেলে রাখা সুমেধার ব্যাগ থেকে তার পরিচয়পত্র পেয়ে বসু পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তার ওই ব্যাগে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই নোটে তার মৃত্যুর জন্য কাউকেই দায়ী করেনি সুমেধা। বরং বাড়তে থাকা লেখাপড়ার চাপকেই সে ‘মৃত্যুর পথ’ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে লিখে গিয়েছে। যদিও সুমেধার পরিবারের লোকজন নোটে লেখা তার এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, পড়াশোনা নিয়ে সুমেধার স্কুল থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি। তাঁরাও লেখাপড়া নিয়ে তাকে বকাবকি করেননি। তবে, সুমেধা মডেলিংয়ে যোগ দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল বাড়িতে। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, সে কারণে সুমেধাকে বাবা-মা মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেন। কিন্তু সেই ‘নিষেধ’ই যে মেয়েকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি বসু দম্পতি।

গত মঙ্গলবার বাঘাযতীনে রোহন রায় নামে এক ছাত্র আত্মঘাতী হয়। ভাল ফুটবল খেলিয়ে রোহনের পরিবার থেকে পড়াশোনার চাপ দেওয়া হয়েছিল। এর পর ১২ বছরের রোহন মায়ের শাড়ি গলায় জড়িয়ে আত্মহত্যা করে। শুক্রবার নিজেকে থামিয়ে দিল সুমেধা বসু। কেন নিজেদের সুযোগ দিতে চাইছে না সুমেধা-রোহনরা? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সুমেধাদের বয়েসে নানা স্বপ্ন-প্রত্যাশা তৈরি হয়। অভাবটা দেখা যায় অন্য জায়গায়। এই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবারিত করার জন্যে জরুরি তথ্য তাদের হাতে থাকে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কিশোর কিশোরীরা ভাবে যখন স্বপ্নটা দেখছি তখনই তা বাস্তবায়িত হতে হবে। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত কিন্তু একদিনে নেয় না ওরা। অথচ ইঙ্গিতগুলি আমাদের চোখেও পড়ে না। বাবা-মায়েরা এই শিশু কিশোরদের ইচ্ছেটাকে সাময়িক দমিয়ে দিচ্ছেন, বুঝতে পারছেন না তাঁর কাছে বিষয়টা কতটা জরুরি।’’ কোনও সুরাহাই কি নেই? অনুত্তমা বলছেন, ‘‘আলোচনার মধ্যে সমাধানে আসার প্রয়াসটা স্কুল-পরিবার জারি থাকলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এমন ব্যর্থতাবোধ তৈরি হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement