সপ্তাহ পার হতে না হতেই ফের বোমা-গুলি চলল নোয়াপাড়ায়। রবিবার রাতে গারুলিয়া পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পিনকল মোড়ে বচসার জেরে বোমাবাজি করে এক দল দুষ্কৃতী। স্থানীয় বাসিন্দারা মারধর করে তাদের তাড়িয়ে দিলেও বেশি রাতের দিকে ফের তারা হামলা চালায়। তৃণমূল কাউন্সিলর দীপা সিংহের বাড়ি এবং উল্টো দিকের হোটেলে বোমা-গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ওই রাতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে হালিশহরেও। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। নোয়াপাড়ার ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বোমাবাজির জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানে।
পিনকল মোড়েই বাড়ি গারুলিয়া পুরসভার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দীপা সিংহের। তাঁর বাড়ির উল্টো দিকে তাঁদেরই একটি হোটেল রয়েছে। ওই হোটেলটি চালান তাঁর দেওর সোনু সিংহ। তিনি জানান, রাত ১০টা নাগাদ একটি গাড়িতে চেপে চার জন তাদের হোটেলে আসে। সেখানে খাওয়াদাওয়া করে তারা। কিন্তু তার পরে খাবারের দাম দিতে অস্বীকার করে। হোটেলের কর্মীরা দাম চাইলে তাঁদের মারধর করার হুমকি দেওয়া হয়। ওই দুষ্কৃতীরা হোটেলের ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা তুলে নেয় বলেও অভিযোগ।
গোলমালের জেরে এলাকার লোকজনের ভিড় জমে যায় সেখানে। ওই মত্ত যুবকেরা পাড়ার লোকেদেরও হুমকি দেয়। তখন পাড়ার লোকজন ও হোটেলের কর্মীরা মিলে পাল্টা তাদের মারধর করেন। সেই সময়ে পুলিশের একটি টহলদারি গাড়ি সে দিকেই আসছিল। পুলিশকে দেখে দুষ্কৃতীরা পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
সোনু বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ চারটি বাইকে করে জনা দশেক দুষ্কৃতী এসে হোটেলের সামনে হুমকি দিতে শুরু করে। তত ক্ষণে হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা দুমদাম করে হোটেলের সামনে বোমাবাজি শুরু করে। তার পরে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। সেই সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র বার করে গুলি চালাতে শুরু করে। একটি গুলি আমাদের জানলার কাচ ভেঙে আলমারিতে গিয়ে লাগে।” বোমা-গুলির জেরে দীপাদেবীর বাড়ির লোকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও। বেশ কিছু ক্ষণ তাণ্ডব চালিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায়।
সোনু বলেন, “এটা একটি দুষ্কৃতী দলের কাজ। ওদের কয়েক জন আমাদের চেনা। ওরা এলাকায় লোহা চোর নামে পরিচিত। কোনও রাজনৈতিক দল ওদের আশ্রয় দিলে তাদের আমি অনুরোধ করব, ওদের পুলিশে ধরিয়ে দিন। বাম আমলে আমরা অনেক বোমা-গুলি দেখেছি। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। বোমা-গুলি চালিয়ে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না। পুলিশকে আমরা জানিয়েছি। আশা করছি, তারা দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করবে।”
নোয়াপাড়ার বিধায়ক, বিজেপি-র সুনীল সিংহ বলেন, “আমি শুনেছি, তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়িতে বোমা-গুলি চলেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সব দলই নিজেদের মতো রাজনীতি করবে। বোমা-গুলি কেন চলবে! এই ঘটনার নিন্দা করছি।” সপ্তাহখানেক আগে এই এলাকাতেই একটি বাড়ির সামনে বোমাবাজি করেছিল দুষ্কৃতীরা। তার পরে রবিবারের বোমাবাজির ঘটনায় এলাকায় প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এ দিকে, ওই রাতেই হালিশহরের যদুনাথবাটী এলাকায় বোমাবাজির ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে এই ঘটনা ঘটে। রাত আড়াইটে নাগাদ একটি বাইকে করে এসে দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। গত কয়েক দিন ধরেই এলাকায় বোমাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আশপাশের কয়েকটি বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সিসি ক্যামেরায় দুষ্কৃতীদের বোমাবাজির ছবি ধরা পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।