অবস্থান: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পড়ুয়ারা। শনিবার, অ্যাকাডেমি-নন্দন চত্বরে। ছবি: শশাঙ্ক
দু’জনেই অসমের বাসিন্দা। ফলে তাঁরা জানেন, নতুন নাগরিকত্ব আইনের জেরে কী হতে পারে। যেখানে নিমেষে কয়েক লক্ষ লোক নাগরিকত্বের পরিচয় হারিয়ে ফেলেন। সেই দু’জন, অভিজিৎ বরা এবং অঙ্কুরান দেওঘরিয়া তাই শনিবার ছুটে এসেছিলেন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের বিক্ষোভ মিছিলে। শিবপুরের আইআইইএসটি-তে ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করা স্নাতকোত্তরের দুই ছাত্র ‘ঘর’ থেকে দেখেছেন ঘরছাড়া হওয়ার আতঙ্ক। অভিজিতের কথায়, ‘‘দেশ জুড়ে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় যে আন্দোলন চলছে তাতে শীঘ্র ওই আইন বাতিল হওয়া দরকার।’’ আর অঙ্কুরানের কথায়, ‘‘দেশের মূল সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মোদী-সরকার ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করছে। এমন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন চাইছি।’’
এমনিতে মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে সারা শহর জুড়ে এ দিন যে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছিল, তাতে একে একে জড়ো হতে থাকেন যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, আইআইইএসটি-সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। পড়ুয়া ছাড়াও দেখা গেল চিকিৎসক দেবাশিস চক্রবর্তী এবং ঝাড়গ্রাম কলেজের বাংলার শিক্ষক স্বাতী চক্রবর্তী এবং সোমা রায়ের মতো বিভিন্ন পেশার মানুষকে।
অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে ক্যাথিড্রাল রোডে এ দিন দুপুর ২টো থেকে জমায়েত শুরু হয়। ঘড়ির কাঁটায় যখন বিকেল ৪টে ১০ মিনিট, তখন দূরের আকাশে চক্কর কাটতে দেখা যায় পরপর তিনটি বায়ুসেনার চপারকে। যা দেখে পড়ুয়াদের মুখে শুধুই ‘গো ব্যাক মোদী।’
আরও পড়ুন: মোদী বিরোধী বিক্ষোভে সড়ক-পাতালে চরম দুর্ভোগ, নাজেহাল শহরবাসী
তার পরেই সাড়ে চারটে নাগাদ অ্যাকাডেমির সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। শুরুর আগেই মিছিল আটকে দেওয়ার কথা বলেছিলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মিরাজ খালিদ। বাস্তবে দেখা গেল অন্য ছবি। প্রায় হাজার পাঁচেক পড়ুয়া ক্যাথিড্রাল রোডের উপরে ঘণ্টাখানেক বসে প্রতিবাদে শামিল হলেন। তাঁদের এমন অনড় মনোভাব দেখে পুলিশের কর্তারা ধর্মতলার ‘ওয়াই’ চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি দেন।
মিছিল শেক্সপিয়র সরণির সংযোগস্থল পর্যন্ত আসতেই ফের রুট নিয়ে আপত্তি জানায় পুলিশ। পড়ুয়াদের জানানো হয়, সেখান থেকে ডান দিকে ঘুরে এক্সাইড মোড়, মৌলালি এবং এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ‘ওয়াই’ চ্যানেল যেতে হবে। ওই রুটে যেতে অস্বীকার করেন পড়ুয়ারা। অতএব বিকেল পাঁচটা নাগাদ ফের শেক্সপিয়র সরণির সংযোগস্থলে অবরোধ হয়। সেখানেই রাস্তা জুড়ে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি আঁকতে থাকেন পড়ুয়ারা। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পুলিশের ঘোষিত নয়া রুট অগ্রাহ্য করে শেক্সপিয়র সরণি, ক্যামাক স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, এস এন ব্যানার্জি হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় মিছিল পৌঁছয় ‘ওয়াই’ চ্যানেলে।
এই পুরো পথটাই পুলিশ ছিল ওঁদের পিছনে। তবে ওয়াই চ্যানেলে পৌঁছনোর পরে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। সেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাক্কাধাক্কি হয়।