Chinese New Year

Lion dance: শহরে চিনা শিল্পী ছাড়াই টিকে নববর্ষের ‘সিংহ নাচ’

এ শহরে টিমটিম করে টিকে থাকা চিনা লায়ন ডান্স পরম্পরার প্রধান মুখও এই জেমস। মালয়েশিয়ায় গিয়ে লায়ন ডান্স, ড্রাগন ডান্সে তালিম নিয়ে এসেছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪২
Share:

চিনা নববর্ষ পালন। সোমবার, চায়না টাউনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রিটার্ন অব দ্য টাইগার!

Advertisement

কৈশোরের নায়ক ব্রুস লি-র কথা মনে পড়ছে জেমস লিয়াওয়ের। কৈশোরে এ শহরে বসেই তাঁর রোমাঞ্চকর বীরত্বের ছবিগুলি দেখতেন জেমস। চিনা মার্শাল আর্টে টাইগার বা মাঙ্কি স্টাইলও তখন রপ্ত করতে হত। এ বারের চিনা নববর্ষের (ইয়ার অব দ্য টাইগার) প্রতীক বাঘের ছবি ট্যাংরা ছেয়ে ফেলার দিনে ছোটবেলার বাঘ ও ব্রুসলি নিয়ে পাগলামির দিনগুলো মনে পড়ছে পঞ্চাশোর্ধ্ব জেমসের।

এ শহরে টিমটিম করে টিকে থাকা চিনা লায়ন ডান্স পরম্পরার প্রধান মুখও এই জেমস। মালয়েশিয়ায় গিয়ে লায়ন ডান্স, ড্রাগন ডান্সে তালিম নিয়ে এসেছেন। তবে পুরনো দিনের সঙ্গে ২০২২-এর ফারাকও বিস্তর। লিয়াওয়ের লায়ন ডান্সের ক্লাবে এখন ভারতীয় বংশোদ্ভুত চিনা নেই এক জনও। ট্যাংরা বা হাওড়ার পাপ্পু সিংহ, অমিত কুমার, গৌরব যাদব, অজয় যাদব, অশোক হেলারাই বচ্ছরকার দিনে মাতিয়ে রেখেছেন কলকাতার চিনাপাড়া।

Advertisement

“তাতে দুঃখ নেই! লায়ন ডান্সের শৈলী চাইনিজ মার্শাল আর্ট থেকেই আসছে। এমন শিল্প শুধু সবার কাছেই গর্বের”— সোমবার ট্যাংরায় বসে বলছিলেন জেমস। টানা ক’দিন তাঁর দলবল নাচের আসরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। বর্ষবরণের রাত থেকে ট্যাংরা, টেরিটিবাজার, বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলেও আসর জমাবে জেমসের দল।

অনেকেই দেখেছেন, দুনিয়ার চিনা বসতিগুলির মতো কলকাতাও এ সময়ে লায়ন ডান্সে মেতে ওঠে। রংবাহারি পোশাকে প্রকাণ্ড সিংহ বা ড্রাগনের ভঙ্গিমায় নাচতে থাকেন শিল্পীরা। জেমসের কথায়, “এখনও এই নাচ কলকাতায় দেখাতে পারছি ভাবলে শান্তি হয়! বড় জোর চার-পাঁচটা দল এই নাচ পারে। বছর ২০-২৫ আগেও প্রতি ট্যানারির একটা করে দল থাকত। ৪০-৫০টা নাচের দল টক্কর দিত এ পাড়ায়।” বছর দশেক আগে দুনিয়ায় বিরল শুধু মেয়েদের একটি দলও কলকাতায় লায়ন ডান্স করেছে। এখন কলকাতার টেরিটিবাজারে স্থানীয় বিহারী, বাঙালি ছেলেপুলেরাও চাইনিজ বাও, সুইমাইয়ের পসরা ফেরি করে। তেমনি চিনাবিহীন চিনা নাচের দলও শহরে দেখা যাচ্ছে।

তবে জেমস গর্বিত মালয়দেশের বিখ্যাত নৃত্যগুরু শিয়াও ফি হংয়ের একমাত্র ভারতীয় শিষ্য হিসেবে। গুরুর নামে তাঁর টিমের নাম ‘ইন্ডিয়া হংটার’! জেমস জানান, লায়ন ডান্সে অন্তত সাত জন লাগবে। সিংহের পোশাকের আড়ালে এক সঙ্গে নাচেন দু-তিন জন। মার্শাল আর্টের কসরত শিখতে হয় বলেই সার্কাসের কায়দায় পর পর উঁচু খুঁটিতে ভর রেখে অনায়াসে সিংহ বেশে এক যোগে লাফাতে পারেন সকলেই। একদা জেমসের দুই কন্যা ইসাবেল ও ক্লোয়িও নাচের দলে ড্রাম বাজাতেন। ড্রাগন নাচে আরও ক’জন শিল্পী বেশি লাগে।

একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী পাপ্পু বা বি কম অনার্স পড়ুয়া গৌরবদের কাছে ‘জেমস স্যরের’ জিমে মার্শাল আর্ট শিখতে গিয়েই এই নাচের প্রেমে পড়া। তবে টাকার জন্য নয়, ভালবেসেই এই নাচ নাচেন তাঁরা। স্থানীয় চিনারা ৪ এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ট্যাংরার পি মেই স্কুলে খাওয়াদাওয়া, গানবাজনায় মাতবেন, তাতে গোটা কলকাতার আমন্ত্রণ।

এখনও এ দেশে কলকাতাই চিনাদের সব থেকে বড় ঘাঁটি। কিন্তু ঘরে ঘরেই কানাডা, অস্ট্রেলিয়ামুখী তরুণ চিনারা। ফলে আশঙ্কা
দানা বাঁধে, কত দিন কলকাতায় দেখা যাবে চাইনিজ ইন্ডিয়ানদের এই চাঁদের হাট।

বাড়ির ভিতরে গুটিকয়েক বুড়োবুড়ি মিলে শুভ প্রতীক কমলালেবু বা ফরচুন রাইস খেয়ে, পূর্বপুরুষদের প্রণাম করে নতুন বছর আসে। সিংহ নাচের জৌলুসটুকুতেই যা কলকাতার সোনালি দিনের ঝিলিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement