আলিপুর চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’। ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দু’দশক ধরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় সে দর্শকদের মনোরঞ্জন করছে। দর্শকদের অনেকেই তাকে নামে চেনেন। শুধু দর্শকরাই নন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীদের অনেকেরই খুব প্রিয় শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’। কিন্তু আচমকা সে যে এমন কাণ্ড করে বসবে তা ভাবতেই পারছেন না কেউ! গত বুধবার সে আক্রমণ করেছে চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্তকে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আশিসবাবু। আপাতত তিনি চিকিৎসাধীন।
এমনিতে বাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভাল। মাঝেমধ্যে অধিকর্তা নিজেই বাবুর ‘এনক্লোজারে’ চলে যেতেন। তার পরিচর্যা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, স্বাস্থ্য কেমন আছে, এ সব তিনি নিজেই খতিয়ে দেখেন। বুধবারও আশিসবাবু গিয়েছিলেন বাবুকে দেখতে। আর তখনই বাবু তাঁকে আক্রমণ করে। আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, ওই দিন দুপুর ২টো নাগাদ আশিসকুমার পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাবুর কাছে গিয়েছিলেন। আচমকাই তাকে ধাক্কা দেয় বাবু। হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে নেয়। এর জেরে আঙুলের উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি সূত্রের দাবি, তাঁর হাতে কামড়ও বসিয়েছে বাবু। তবে বিষয়টি আশিসবাবু বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। বাবু কেন এমন আচরণ করল,সেটাই এখন খতিয়ে দেখতে চান তিনি। আশিসবাবুকে ফোন করা হলে, তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।
আলিপুর চিড়িয়াখানার সহ-অধিকর্তা পিয়ালী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,বুধবারের ঘটনার পর অধিকর্তাকে প্রথমে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর আঙুলে গুরুতর চোট রয়েছে।
আরও পড়ুন-বিদায় নিয়েছে বর্ষা, স্থানীয় মেঘে শুক্রবারও বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে
আরও পড়ুন-গাড়ির মধ্যে বুলেট, তরুণের কনুই ও ঘাড়ে ফুটো, অথচ পুলিশ বলল, মৃত্যু হয়েছে গাড়ি দুর্ঘটনায়!
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, বাবুর জন্ম ১৯৮৮-তে। ১৯৯৮ সালে তাকে চেন্নাই থেকে কলকাতায় আনা হয়। তবে,বৃদ্ধ হয়েছে বাবু। বয়স তিরিশ পেরিয়েছে। বছর তেরো আগে সঙ্গিনী মারা যাওয়ার পর বেশ কিছু দিন মনখারাপ ছিল তার। নতুন করে কোনও সঙ্গিনীও জোটেনি বাবুর। এ ভাবেই তার দিন কাটছিল।সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ বছর বাঁচে শিম্পাঞ্জিরা। তবে যত্ন, নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসা মেলায় সেই আয়ুর মেয়াদটা কয়েক বছর বে়ড়ে যায় বলে মত পশুরোগ বিশেষজ্ঞদের।চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক জানান, বাবুর বয়স হয়েছে। তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন। আগের মতো সব সময় দর্শকদের সামনে আসতেও পারেনা সে। সম্প্রতি তিনটি শিশু শিম্পাঞ্জি পাচারের সময় উল্টোডাঙা থেকে ধরা পড়ে। তারাই এখন প্রতি দিন দর্শকদের মনোরঞ্জন করে।
প্রাতরাশ থেকে শুরু করে বাবুর সারাদিনের খাওয়াদাওয়া, পরিচর্যা— সবটাইবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কোনও ত্রুটি রাখা হয় না। তার পরেও বাবু কেন এমন আচরণ করল? প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বয়সজনিত কারণে হয়তো বাবুর মানসিক স্থিতি বিঘ্নিত হয়েছে। তার শারীরিক কোনও অসুস্থতা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।