বড়দের মাথা সুরক্ষিত হলেও হেলমেট নেই খুদে বাইক আরোহীর। পার্ক সার্কাস মোড়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
‘বাবার মাথা ভীষণ দামি, হেলমেটেতে ঢাকা। ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা।’
একরত্তিদের বসিয়ে মোটরবাইক চালানোর সময়ে তাদের হেলমেট পরানো নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কয়েক বছর আগে এই স্লোগানকেই হাতিয়ার করেছিল কলকাতা পুলিশ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি, অভিভাবকদের সচেতন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বহু এলাকায় টাঙানো হয়েছিল এই স্লোগান লেখা হোর্ডিং-ব্যানার। তবে, পুলিশের তরফে সেই উদ্যোগের পরেও এই সংক্রান্ত সচেতনতা এসেছিল কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ছিলই। যে সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছিল গত কয়েক বছরে শহরে একাধিক বাইক দুর্ঘটনা এবং মাথায় হেলমেট না থাকায় একরত্তিদের আহত হওয়ার ঘটনায়। গত মঙ্গলবার সল্টলেকের বাইক দুর্ঘটনা এবং পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনাও ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, একরত্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে সেই একই জায়গায়।
সল্টলেকের ঘটনায় মায়ের স্কুটারের পিছনে বসে স্কুল থেকে ফিরছিল বালক। অভিযোগ, মায়ের মাথায় হেলমেট থাকলেও তার মাথা ছিল ফাঁকা। সেই সময়ে রেষারেষির জেরে দ্রুত গতিতে আসা একটি বেসরকারি বাস পিছন থেকে স্কুটারে ধাক্কা দিলে গুরুতর ভাবে আহত হয় বালকটি। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ওই পড়ুয়ার মাথায় হেলমেট থাকলে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা হয়তো অনেকটাই কমানো যেত। যদিও দুর্ঘটনার পরেও দেখা যায়, অভিভাবকদের সচেতনতা আসেনি। পুলিশি নজরদারিতে ঢিলেমির ছবিটাও বদলায়নি। সেই ঘটনার পরেও পুলিশের সামনে বিনা হেলমেটে একাধিক বাইক আরোহী পড়ুয়ার দেখা মিলেছে শহরের আনাচকানাচে।
বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাস, যাদবপুর, গল্ফ গ্রিন, শ্যামবাজার-সহ একাধিক জায়গায় এই বিধি ভাঙার ছবিটাই নজরে এসেছে। অভিভাবকদের মাথায় হেলমেট থাকলেও বাইক আরোহী খুদেদের ক্ষেত্রে তার বালাই নেই। এমনকি, পিছনের সিটে একাধিক পড়ুয়াকে বিপজ্জনক ভাবে বসিয়ে বাইক ছোটানোর ছবিও নজরে এসেছে। অভিভাবকদের প্রশ্ন করলে কেউ স্বল্প দূরত্বের অজুহাতদেখিয়েছেন, কেউ আবার পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এত ছোটদের হেলমেট পাওয়া যায় নাকি?’’ কাউকে আবার জরিমানা থেকে বাঁচতে খুদে বা নিজের মাথায় হেলমেট পরতে দেখা গেলেও তাতে বেঁধে রাখার অংশটি নজরে আসেনি।
কিন্তু বিধিভঙ্গে কী ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ? কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আরোহী হেলমেট না পরলে মোটরযান আইনের ১২৮ এবং ১৯৪ (সি) ধারায় মামলা রুজু করা যেতে পারে। এমনকি, প্রতি বার বিধিভঙ্গে এক হাজার টাকা জরিমানা করার আইনও রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে একরত্তিদের মাথায় হেলমেট না থাকার মতো অপরাধের ক্ষেত্রেও পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা কার্যত হাতে গোনা। সল্টলেকের দুর্ঘটনার পরেও পুলিশি ঢিলেমির ছবির বদল হয়নি। বাইপাসে কর্তব্যরত এক সার্জেন্ট যদিও বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের মাথায় হেলমেট না থাকার অপরাধে ব্যবস্থা নিতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়তে হয়। অভিভাবকেরাও একজোট হয়ে প্রতিবাদ করেন। ফলে বহু ক্ষেত্রে দেখেও না দেখার মতো করে থাকতে হয়।’’
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা যদিও আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করছেন। এক কর্তার কথায়, ‘‘সব ক্ষেত্রে তো জোর করে সব কিছু হয় না। গত কয়েক বছর ধরেই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁরাও যাতে হেলমেট পরেন, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলগুলিকে সক্রিয় করা হয়েছে।’’