ফাইল চিত্র
উত্তরবঙ্গের ‘খলনায়ক’ ভাইরাসের আতঙ্ক এ বার এ শহরেও! যে ভাইরাসের কারণে সপ্তাহখানেক ধরে উত্তরবঙ্গে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। বেশ কয়েক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনও। আশঙ্কা, সেই জ্বরই এখন পৌঁছে গিয়েছে কলকাতায়। গত কয়েক দিনে শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি, হাসপাতালের বহির্বিভাগে এবং ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের কথায়, ‘‘এটা আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির ফল। প্রতি বছরই এই সময়ে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাই অযথা আতঙ্কিত না হওয়াই উচিত।’’ পরিজনদের উদ্বেগের পিছনে অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও কাজ করছে বলে মত চিকিৎসক মহলের। তাঁরা জানাচ্ছেন, অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিলই। ফলে টানা জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিন্তা বেড়েছে বাবা-মায়ের।
এই মুহূর্তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, পার্ক সার্কাসের এক বেসরকারি শিশু হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ১৫-২০ জন করে জ্বরে আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে বাবা-মা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। মনে রাখতে হবে, এটা সাংঘাতিক কিছু নয়। প্রতি মরসুমেই এমন হয়ে থাকে। কোনও কোনও সময়ে প্রকোপটা বেশি হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আরএস ভাইরাস খুবই পরিচিত এবং চিকিৎসাও আলাদা কিছু নয়।’’ তবে বিশেষ কিছু উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন বলে জানান ওই চিকিৎসক।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, সাধারণত একটু বড় শিশুদের সারা বছরই ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। ছ’মাস থেকে এক বছর বা একটু বেশি বয়সিদের আবার ‘ব্রঙ্কিয়োলাইটিস’-এ আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করে নেবুলাইজ়ার দিতে হয়। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘আরএস, অ্যাডিনো, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেটানিমো, সোয়াইন ফ্লু— এই সমস্ত ভাইরাসের কারণেই প্রতি বছর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এই সব ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার নগণ্য। সঙ্কটজনক হওয়ার সংখ্যাও খুব বেশি নয়।’’ শিশুরোগ চিকিৎসকেরাও জানান, খেয়াল রাখতে হবে ভাইরাসজনিত রোগের কারণে যেন ফুসফুসে ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে না যায়। কারণ ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত ছড়ায়। ফলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আনন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, ‘‘নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে। হাসপাতালে ভর্তির বেশি প্রয়োজন পড়ছে। তার থেকে বেশি বয়সের বাচ্চাদের দু’-তিন দিন জ্বর ও দিন সাতেক কাশির উপসর্গ থাকলেও বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।’’ চিকিৎসকেরা একটা বিষয়ে বার বার সতর্ক করছেন। তাঁদের মতে, খোঁজ নিলেই জানা যাচ্ছে, আক্রান্ত শিশুর পরিবারের কেউ না কেউ দিন কয়েক আগে ভাইরাসজনিত রোগে ভুগেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘শিশুরা এখন বাইরে তেমন বেরোচ্ছে না। মরসুমের প্রকোপ, অর্থাৎ কাশি, হাঁচি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে ভোগা বাড়ির বড়দের সংস্পর্শেই আক্রান্ত হচ্ছে তারা।’’