পরিকল্পনা করেই ফুটপাথ থেকে তিন বছরের শিশুকে চুরি ও পাচার করেছিল অভিযুক্ত। পরিজনেদের যাতে সন্দেহ না হয়, তার জন্য এক সপ্তাহ ধরে তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করে, ওই শিশু ও তার ভাই-বোনদের লজেন্স বা বিস্কুট খাইয়ে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়ায় সে। পুলিশের দাবি, এ কারণেই দিনের বেলা সকলের সামনে দিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয়নি তাকে। বৌবাজার থানা এলাকার ফুটপাথ থেকে শিশু পাচারের তদন্তে নেমে ধৃত সুনীল দাসকে জেরায় এমনটাই দাবি পুলিশের।
লালবাজার সূত্রে খবর, গত ১ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যোগাযোগ ভবনের সামনের ফুটপাথ থেকে নিখোঁজ হয় ওই শিশু। তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে জোড়াসাঁকো থেকে সুনীলকে ধরে বৌবাজার থানা। পুলিশের দাবি, ধৃতকে জেরায় জানা গিয়েছে— শিশুটিকে বিহারের ঝাঁঝা-য় এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সুনীল। সেখান থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করে কলকাতায় আনে পুলিশ। তার আগেই অবশ্য তাকে বিহারের জামুই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে পেশ করেছিলেন ওই মহিলা।
তদন্তকারীরা জানান, ঝাঁঝার সিনড্রিলা গ্রামের রিনা দাস নামে ওই মহিলার পরিচিত সুনীল। রিনার স্বামী কেরলে কাজ করেন। তাঁদের দুই মেয়ে রয়েছে। পুলিশের দাবি, রিনা সুনীলকে একটি শিশু পুত্রের খোঁজ দিতে বলেন। কম্পিউটার সারাইয়ের পেশার সূত্রে সুনীল রোজ চাঁদনিতে যেত। পুলিশের দাবি, সুনীল জানায়— ফুটপাথে শিশুগুলিকে দেখে ছক কষে রোজ তাদের খাবার কিনে দিতে থাকে সে। পরিচিতি বাড়ার সুযোগ নিয়ে ছেলেটিকে সে জামুই নিয়ে যায়। এবং রিনার হাতে তাকে দিয়ে কুড়ি হাজার টাকা নেয়।
পুলিশ জানায়, রিনা শিশুটিকে রেখে দিলেও এক প্রতিবেশী তা খেয়াল করে থানায় জানান। ইতিমধ্যেই শিশুটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান রিনা। পরে এক প্রভাবশালীর মাধ্যমে গত সোমবার জামুইতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে পেশ করেন শিশুটিকে। ওই দিনই কলকাতায় সুনীলকে ধরে পুলিশ। তাকে নিয়ে জামুই থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘জেরায় রিনার দাবি ছিল, তিনি শিশুপুত্র দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। সুনীল ওই শিশুটিকে দেওয়ার সময়ে সন্দেহ হলেও বিশ্বাস করে তিনি ঠকে যান।’’ রিনা সত্যি বলছেন কি না, দেখা হচ্ছে।