মৃত মহম্মদ গুড্ডু।
বছর দশেক আগে বজবজের গোলাম রসুল রোডে পুরনো বাড়ির বারান্দা ভেঙে আহত হয়েছিলেন এক মহিলা। শুক্রবার রাতে ওই বাড়িরই বারান্দা ভেঙে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত আর এক শিশু একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার রাতেই বাড়ির মালিক মহম্মদ সিরাজউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে বজবজ থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় বজবজের গোলাম রসুল রোডে নিজেদের দোকানের সামনেই খেলছিল মহম্মদ সাজিদ (৫) ও তার মাসতুতো ভাই মহম্মদ গুড্ডু (৮)। রাত আটটা নাগাদ দোতলা বাড়ির উপরের তলার বারান্দা ভেঙে গুড্ডু ও সাজিদের উপরে পড়ে। তারা দু’জনেই চাপা পড়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। আহত দুই শিশুকে বজবজের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে গুড্ডুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সাজিদের বাঁ পা পুরোপুরি বাদ গিয়েছে। রাতেই তাকে একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সাজিদকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগে বিহারের সমস্তিপুর থেকে বজবজে মাসির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল গুড্ডু। সাজিদরা বজবজের বাড়িতে ভাড়া থাকে। গুড্ডুর বাবা ছেলেকে রেখে বৃহস্পতিবারই বিহার ফিরে গিয়েছেন। গোলাম রসুল রোডের পাশেই লেপ, বালিশ তৈরির দোকান রয়েছে সাজিদদের। ওই দোকান সাজিদের দাদু সামলান। সাজিদের বাবা স্থানীয় মসজিদে আজান দেন। শনিবার সন্ধ্যায় বজবজের গোলাম রসুল রোডে ওই দোকানের সামনে মাসতুতো ভাই সাজিদের সঙ্গে খেলছিল গুড্ডু। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময়ে বাড়ির উপরের তলার বারান্দা ভাঙলে গুড্ডু ও সাজিদ চাপা পড়ে যায়। গুড্ডু বিহারের সমস্তিপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং আহত সাজিদ বজবজের স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার সকালেই বিহার থেকে গুড্ডুর বাবা-মা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
বজবজের এই বাড়িটির বারান্দা ভেঙেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। ছবি: অরুণ লোধ
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বজবজে একাধিক জীর্ণ বাড়ি থাকলেও বাড়ির মালিক বিল্ডিং সংস্কার করেন না। শুক্রবার রাতে ৪০, গোলাম রসুল রোডের যে বাড়িটি ভেঙে পড়েছে, সেটি বজবজ পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। তিন নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া সতেরো নম্বর ওয়ার্ড। এই এলাকায় কয়েকশো বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস করে চলেছেন ভাড়াটেরা। স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘রেললাইনের দু’পারে সার দিয়ে বিপজ্জনক বাড়িতে প্রাণ হাতে করে বসবাস করেন অনেকে। বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিত করে পুরসভাও কোনও নোটিস পাঠায় না। জীর্ণ বাড়ি সংস্কারে পুরসভার বিন্দুমাত্র ভূমিকাই নেই।’’ বজবজ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এলাকা ঘুরে ঘুরে বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিত করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। কোনও অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই মাত্র।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর শঙ্কর গোপাল প্রামাণিকের দাবি, ‘‘জীর্ণ বাড়ি সংস্কারের কথা বলতে গেলে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে একে অন্যের উপরে দায় চাপান। আদালতের হুমকি দেন। আমরা অসহায়।’’