মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলায় বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের একাংশের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীই যদি এমন অভিযোগ করেন, তা হলে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাঁদের ভরসা থাকবে কী ভাবে? এমন সংশয় যে হতে পারে, সে কথা মানছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তবে তাঁদেরই অন্য একটি অংশ এটাও বলছেন, ‘‘সরাসরি এমন ধরনের কথা না বললেও পারতেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
স্পেন সফর সেরে ফেরার পরে টানা প্রায় ৫০ দিন কেন তিনি নবান্নে আসতে পারেননি, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুধবার পিজিতে হাঁটুর ভুল চিকিৎসার প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। তাঁর অধীনেই রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। ফলে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যের এক নম্বর সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল সম্পর্কে এমন অভিযোগ তুলছেন, তখন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। গত জুনে উত্তরবঙ্গে জরুরি অবতরণের সময়ে হেলিকপ্টার থেকে নামতে গিয়ে বাঁ পায়ের হাঁটুতে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। এসএসকেএমের চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার পরে জুলাইয়ে ছোট একটি অস্ত্রোপচার (প্রসিডিয়োর) করা হয়। এর পরের মাসে তিনি স্পেন সফরে গিয়ে ফের ওই হাঁটুতে চোট পান। ফিরে এসে এসএসকেএমে দেখালে হাঁটু থেকে জমা জল বার করেন চিকিৎসকেরা। তাতেই ওই প্রসিডিয়োরের জায়গায় সংক্রমণ হয়ে সেপটিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি যেখানে তাঁর চিকিৎসা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকই বলছেন, ‘‘রোগীদের তো এ বার মনে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসায় যদি ভুল হয়, তা হলে তাঁদের ক্ষেত্রেও গাফিলতি হতেই পারে।’’
তবে, এমন ভাবে ‘ভুল চিকিৎসা’ বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলেই মত বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কুণাল সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মতো ব্যস্ত মানুষ এত দিন ঘরবন্দি থাকার হতাশা থেকেই হয়তো কথাটি বলেছেন। কিন্তু তা না বলে, চিকিৎসা সফল হয়নি বা তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, এটা বলা যেতেই পারে। কারণ, যে কোনও চিকিৎসা সফল না হওয়া কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিক।’’ পাশাপাশি, কুণাল এটাও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে কেন্দ্র করে যে ভাবে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে, তা কাম্য নয়। শাসকদলেরই এক নেতা সরাসরি এসএসকেএমের নামে নিন্দা করছেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও বলতে পারি, দেশের প্রথম সারির পাঁচটি হাসপাতালের একটি এসএসকেএম।’’
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলছেন, ‘‘পিজি হাসপাতাল রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্যতম উৎকর্ষ কেন্দ্র। গোটা রাজ্যের সাধারণ মানুষের অন্তিম গন্তব্য। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীই যদি সেই হাসপাতাল সম্বন্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন, তা হলে মানুষ যাবেন কোথায়?’’ তিনি এটাও বলছেন, ‘‘এমন পদে থেকে কারও এই ধরনের মন্তব্য বিপজ্জনক। এর ফলে মানুষ দিশাহারা হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হবেন।’’
শারীরিক সমস্যার কষ্ট থেকে যদি প্রচলিত কথার মতো ‘ভুল চিকিৎসা’র বিষয়টা মুখ্যমন্ত্রী বলে থাকেন, তা হলে কিছু বলার নেই বলেই মনে করছেন এসএসকেএমের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘ভুল চিকিৎসা হয়েছে, এটা কি কোনও চিকিৎসক বলেছেন? যদি বলে থাকেন, তা হলে তো অভিযোগ বিশদে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’
এ নিয়ে সার্বিক তদন্তের দাবি তুলেছে ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘তাঁর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর যে ধরনের বিধিনিষেধ মেনে চলা দরকার ছিল, তা কি তিনি মেনেছেন?’’