সরোবরের জলে নামার জন্য দেওয়া হয়েছে মই।—নিজস্ব চিত্র।
দূষণ রুখবে কে? জলে পুণ্যার্থীদের নামতে মই বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজনই।শুধু তাই নয়, গাছে গাছে হ্যালোজেন আলো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছট পুজো উপলক্ষে রবীন্দ্র সরবরে এমন আয়োজন দেখে হতবাক পরিবেশকর্মী থেকে প্রাতঃভ্রমণকারীরা। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই যে যাঁর মতো এলাকাও ঘিরে রেখেছেন। পরিবেশকর্মীদের আক্ষেপ, আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা দেখার কথা যাদের, তারাই কার্যত দর্শকের ভূমিকায়।
তাঁদের আরও অভিযোগ, জলে নামার জন্য মই-এরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সূর্য প্রণাম ও স্নানের মাধ্যমে ছট-মায়ের আরাধনা করেন ভক্তরা। ফলে ওই মই দিয়েই জলে নামবেন তাঁরা। জলের মধ্যে দুধ-তেল, ফুল, বেলপাতা-সহ বিভিন্ন সামগ্রীও মিশে যাবে। এর ফলে জলদূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। জীব-বৈচিত্রে তার প্রভাবও পড়বেই বলেই মত পরিবেশকর্মীদের।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই যে যার মতো জায়গা আটকেছে।
আরও পড়ুন: ‘দিল্লির পরিস্থিতি এত ভয়াবহ! মর্নিং ওয়াকেও বেরোতে পারি না’, তোপ বিচারপতির
রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এর বিকল্প হিসেবে আদিগঙ্গা এবং মহানগরের অন্যান্য জলাশয়ে ছট পুজো পালন করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে ‘কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে নজররাখতেও বলা হয়েছিল। তার পরেও কেন রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর উপাচারের আয়োজন হচ্ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা না হলেও, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (সদর) সুপ্রতীম সরকার বলেন, “আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাতীয় হ্রদ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় থাকা রবীন্দ্র সরোবরের দূষণ নিয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি মঙ্গলবার সরবরে গিয়ে এই গোটা বিষয়টি ছবি এবং ভিডিয়ো তুলে রেখেছেন। এ নিয়ে তিনি ফের আদালতেরই দ্বারস্থ হবেন।
আরও পড়ুন: এখনও আমি ওই ট্রমার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না
লেকের জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েইছে, পাশাপাশি শব্দবাজি ফাটানোরও একটা প্রবণতা দেখা গিয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। এজন্য বিপদে পড়েছে লেক এলাকার পাখিরা।
পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, “আদালতের নির্দেশ অমান্য করা উচিত হয়। সরোবরে যে কোনও রকম সামাজিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সরোবর ছাড়াও শহরের অন্যান্য জলাশয়ের দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।”
শুধু রবীন্দ্র সরোবর নয়, উত্তরবঙ্গের মহানন্দা নদী-সহ সারা রাজ্যের বিভিন্ন জলাশয়ের ক্ষেত্রেই ছট পুজোর বিধি-নিষেধ নিয়ে নির্দেশিকা দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।