R G Kar Hospital Incident

মধ্যরাতে আচমকা ভাঙচুর আরজি করে, তাণ্ডব জরুরি বিভাগেই, কাঁদানে গ্যাস, নামল র‌্যাফ

মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের ‘রাত দখলের’ কর্মসূচির মধ্যেই তুলকালাম পরিস্থিতি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

দৃপ্ত দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ০০:৩৮
Share:

(বাঁ দিকে) তাণ্ডব আরজি কর হাসপাতালে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হচ্ছে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি চলাকালীনই তাণ্ডব চালানো হল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কোলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালালেন একদল ব্যক্তি। একই সঙ্গে ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালের বাইরের চত্বরেও। বুধবার মধ্যরাতে হামলাকারীদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমও। ভাঙচুর করা হয় আরজি করের পুলিশ ফাঁড়িও। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনাস্থলে সীমিত সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকলেও তাঁরা প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেননি বলে অভিযোগ। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। নামানো হয় র‌্যাফ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়। তার আগে ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। এই হামলার ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। গভীর রাতে তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন একেবারেই নিয়ন্ত্রণে।’’ যদিও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ওই হামলাকারীদের পরিচয় জানা যায়নি। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, জানা যায়নি তা-ও।

Advertisement

লন্ডভন্ড জরুরি বিভাগ। —নিজস্ব চিত্র।

বুধবার রাত তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। আরজি করের দিকে এগোচ্ছিল মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির একটি মিছিল। ঠিক সেই সময়েই, একদল ব্যক্তি আরজি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালান। তাঁদের কয়েক জনের হাতে রড এবং লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়। ভিতরে ঢুকে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেন তাঁরা। ভেঙেচুরে ফেলা হয় জরুরি বিভাগের সব কিছুই। টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ, সিসিইউ, ওষুধের স্টোররুম হামলাকারীদের হাতে চুরমার হয়ে যায়। মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে ওষুধপত্র, ইঞ্জেকশনের ভাঙা ভায়াল। ওলটপালট করে দেওয়া হয় বেড, আসবাবপত্র। গোটা জরুরি বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চুরমার হওয়া কাচ। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, ‘‘হামলার সময় আমরা পালিয়ে ছ’তলায় উঠে গিয়েছিলাম কোনওক্রমে। ওরা চার তলা অবধি উঠে এসেছিল। চার তলার গেটটাও ভেঙে ফেলে। তবে উঠতে পারেনি। এক তলার জরুরি বিভাগে কিছুই আর প্রায় অবশিষ্ট নেই।’’

ভিতরের পাশাপাশি হামলা চালানো হয় হাসপাতালের বাইরেও। হাসপাতাল চত্বরে রাখা একের পর এক বাইকে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙা হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি ও বাইক। পুলিশের বসানো সমস্ত গার্ড রেল ফেলে দেওয়া হয়। আক্রমণ চালানো হয় আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও। মঞ্চ ভাঙার জন্য আক্রমণকারীরা যখন উদ্যত, সেই সময় এক মহিলা আন্দোলকারীকে হাত জোড় করে তাঁদের মঞ্চ না-ভাঙার অনুরোধ জানাতেও দেখা যায়। গোটা সময় জুড়ে চলে ইটবৃষ্টিও।

Advertisement

ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়িও। —নিজস্ব চিত্র।

এর পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় র‌্যাফ। তারা এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ভিড়। হামলাকারীদের একাংশকে তাড়া করে এলাকাছাড়া করে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে একদল লোককে হাসপাতালের পাশের খালপাড় ধরে গলিপথে দৌড়তে দেখা যায়। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট। হামলাকারীদের ছোড়া ইটে মানিকতলা থানার ওসি জখম হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার কাজের অংশ। কিন্তু প্রতিবাদের নামে সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রীদের আঘাত করা হয়েছে।’’

হামলাকারীদের তাড়া করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ শুরুতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হঠাৎ হামলার ঘটনায় কেন দ্রুত পদক্ষেপ করল না পুলিশ? উঠেছে সেই প্রশ্ন। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ কমিশনার। তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’

রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ‘‘রং না দেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের ধরুন! পড়ুয়াদের দাবি ন্যায্য ও সঙ্গত! তাঁদের বাঁচান!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement