পার্ক সার্কাসের সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)।—ছবি সংগৃহীত।
পুলিশের হাতে ধরা পরা ব্যক্তিদের থেকে যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত হয়, সেগুলির ডিজিটাল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য রাজ্যে একমাত্র ভরসা পার্ক সার্কাসের সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)। কিন্তু অভিযোগ, রাজ্য বা কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিরা ডিজিটাল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সেখানে হাজির হলে নমুনা না নিয়েই তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত হওয়া মোবাইলের ফরেন্সিক পরীক্ষা না হওয়ায় ধৃতদের অনেকের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দিতে দেরি হচ্ছে। ফলে তারা আদালত থেকে সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে সাইবার অপরাধের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষত, মোবাইলের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর থানা থেকে এক পুলিশকর্মী হাজির হয়েছিলেন পার্ক সার্কাসের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে। ওই পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘নিজের মোবাইলে এক তরুণীর অশ্লীল ছবি তোলায় গ্রেফতার হয়েছিল এক যুবক। তার কাছ থেকে ফোনটি বাজেয়াপ্ত করার পরে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কলকাতায় এসেছি। কিন্তু পরীক্ষাগারের কর্মীরা জানালেন, এখানে পরীক্ষা হবে না। হায়দরাবাদ অথবা গুয়াহাটি যেতে হবে।’’
একই কথা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার এক পুলিশকর্মীর। তাঁর কথায়, ‘‘সাইবার অপরাধীদের থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোবাইল ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর জন্য এনেছিলাম। সারা দিন অপেক্ষা করার পরেও পরীক্ষা হয়নি। বাঁকুড়া ফিরে যেতে হয়েছে।’’ পাণ্ডবেশ্বর বা বিষ্ণুপুরই শুধু নয়, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলিশকর্মীরা আসছেন ডিজিটাল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। অভিযোগ, ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত দিন কলকাতায় ডিজিটাল ফরেন্সিক পরীক্ষা হচ্ছিল। এ বার ওই পরীক্ষা এখানে না হওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে।’’ কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাইবার ক্রাইম) অপরাজিতা রাই বলেন, ‘‘এখন থেকে এই ধরনের ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য আমরা হায়দরাবাদে নমুনা পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’
সম্প্রতি বাঁকুড়া সদর থানা থেকে এক পুলিশকর্মী মোবাইলের ডিজিটাল ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে পার্ক সার্কাসের ওই পরীক্ষাগারে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক বছর আগে ওই নমুনা এখানে জমা দেওয়া হয়েছিল।’’ কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে ডিজিটাল পরীক্ষার জন্য পুলিশের কাছ থেকে নমুনা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
ওই পরীক্ষাগারের অধিকর্তা বি বাদোনিয়া বলেন, ‘‘২০১৬ থেকে জমা হওয়া এক হাজারেরও বেশি নমুনার রিপোর্ট এখনও দেওয়া হয়নি। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য ভরসা মাত্র দু’টি যন্ত্র। প্রয়োজন দশটি যন্ত্রের। পাশাপাশি, নমুনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বিজ্ঞানীও নেই। তাই রাজ্য বা কলকাতা পুলিশ
আমাদের কাছে এলে তাদের হায়দরাবাদ অথবা গুয়াহাটিতে যেতে বলছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বর্তমানে সাইবার অপরাধ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। অন্য রাজ্যে পুলিশের নিজস্ব সাইবার ল্যাবরেটরি রয়েছে। এ রাজ্যে হচ্ছে না কেন?’’ কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রিপন স্ট্রিটে কলকাতা পুলিশের নিজস্ব একটি ফরেন্সিক ইউনিট চালুর প্রস্তাব আগেই হয়েছে। সেটি কার্যকর হলে ডিজিটাল ফরেন্সিক ইউনিটও চালু করা হবে।’’