হটমিক্স প্লান্ট।
কলকাতা পুরসভার গড়াগাছা ও পামারবাজার হটমিক্স প্লান্ট পরিবেশবান্ধব নয় বলে প্রশ্ন তুলেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এই নিয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াইও চলছে। এর পরেই পরিবেশ আদালতকে পুরসভা জানিয়েছিল, রাজারহাটের শিরাকোলে পরিবেশবান্ধব ‘ব্যাচ মিক্স প্লান্ট’ তৈরির জন্য জায়গা খুঁজছে তারা। প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমিটারের জায়গা দেখাও হয়েছে। কিন্তু শিরাকোলে প্লান্ট করার যৌক্তিকতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
পর্ষদের তরফে বলা হয়েছে, শহর থেকে শিরাকোলের ওই জায়গার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। রাস্তা সারাইয়ের ক্ষেত্রে ‘মিক্স’ বা প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরির সময়ে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্লান্ট থেকে কাজের জায়গায় মিশ্রণ যদি ১০০-১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকাকালীন পৌঁছয়, তা হলে মেরামতি যথাযথ হয়। না হলে কাজ ঠিক মতো হয় না। কিন্তু ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে রাস্তা সারাইয়ের উপাদান আনতে অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে। ফলে মেরামতি ঠিক মতো হবে না বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেই কারণে এমন জায়গায় প্লান্ট তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে রাস্তা মেরামতির উপাদান দ্রুত কাজের জায়গায় আনা যায়। তাই জরুরি ভিত্তিতে (অন আরজেন্ট বেসিস) অন্যত্র ‘ড্রাম’ বা ‘ব্যাচ টাইপ হট মিক্স প্লান্ট’ তৈরির জন্য পুরসভাকে সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
যদিও পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরেই গড়াগাছা ও পামারবাজারের হটমিক্স প্লান্টগুলি পরিবেশবান্ধব করে তুলতে প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো হয়েছে। ফলে আদৌ অন্য প্লান্টের প্রয়োজন হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই হট মিক্স প্লান্ট মামলার শুনানি ছিল। বিটুমিন গলানোর জন্য শহরের মধ্যে অস্থায়ী ‘হট মিক্স প্লান্ট’ আর চালানো যাবে না বলে সেখানে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। কলকাতা পুরসভার আইনজীবী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেন, ‘‘বর্তমান প্লান্টগুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম যন্ত্র বসানো হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি মেনে যদি কাজ হয়, তা হলে শিরাকোলে প্লান্ট তৈরির প্রয়োজন না-ও হতে পারে।’’
যদিও মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, প্লান্ট চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছে, তা কলকাতা পুরসভার পক্ষে মেনে চলা অসম্ভব। কারণ, গড়াগাছা ও পামারবাজারের প্লান্টগুলি অনেক পুরনো। আধুনিক যন্ত্র বসিয়ে সেগুলিকে কতটা পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘এমনিতেই গড়াগাছা ও পামারবাজারের প্লান্ট চালানোর জন্য (কনসেন্ট টু অপারেট) প্রয়োজনীয় সম্মতি নেই।’’
ফলে ‘হট মিক্স’ নিয়ে ‘গরম বিতর্ক’ অব্যাহত!