মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
সংসদে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্নকাণ্ডে বহিষ্কৃত হন মহুয়া মৈত্র। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আবার মহুয়াকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, ওই মামলাতেই তৃণমূল প্রার্থীর বাসস্থানে তল্লাশি চলছে শনিবার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-ও সিবিআই হানার কথা জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সিবিআইয়ের একটি দল শনিবার সকালে আলিপুরে ‘রত্নাবলী’ নামে একটি আবাসনে যায়। জানা যাচ্ছে, সেখানে ন’তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন মহুয়ার বাবা দীপেন্দ্রলাল মৈত্র। সেখানেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের একটি দল গিয়েছে।
লোকসভা ভোটের মুখে বাংলার শাসকদলের একাধিক নেতা এবং দলের ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের কলকাতার বাড়িতে হানা দেন আয়কর বিভাগের কর্তারা। আবার রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বাড়িতে শুক্রবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি। এমনটাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে চন্দ্রনাথের একটি মোবাইলও। সেই মোবাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। ইডি জানিয়েছে, চন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে বেশি কিছু নথিও উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া টাকার উৎস নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি বলেও খবর ইডি সূত্রে।
অন্য দিকে, সংসদে টাকা নিয়ে প্রশ্নকাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে গত ১৯ মার্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল লোকপাল। বরখাস্ত হওয়া তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে বর্ণনা করা হয় লোকপালের নির্দেশিকায়। এর পর সিবিআইয়ের তরফে মহুয়ার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের হয়।
মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ওই অভিযোগ তোলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি দাবি করেন দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া। পরিকল্পনামাফিক সংসদে ‘নিশানা’ করেন শিল্পপতি গৌতম আদানিকে। অভিযোগ, সবটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য। এই অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে বরখাস্ত করার দাবি তোলেন বিজেপি সাংসদ। তার আগে মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই-এর বিভিন্ন অভিযোগে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল।
অন্য দিকে, মহুয়া প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। যদিও শিল্পপতি হীরানন্দানি নিজে একটি হলফনামা দিয়ে জানান, মহুয়ার সংসদের লগ ইন আইডি জেনে তাতে প্রশ্ন টাইপ করতেন তিনি। কিন্তু ঘুষের অভিযোগ মানেননি। নিজের লগ ইন আইডি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন মহুয়াও। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বক্তব্য না শুনেই লোকসভার এথিক্স কমিটি তাঁকে একতরফা ভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত লোকসভায় পাশ হয়ে যায়। এর পর তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মহুয়া। সম্প্রতি সেই মামলায় শীর্ষ আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে লোকসভার সচিবালয়। সুপ্রিম কোর্টের নোটিসের উত্তরে গত ১২ মার্চ লোকসভার সচিবালয় জানিয়েছে, সংবিধানের ১২২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনসভার অভ্যন্তরীণ কর্মপদ্ধতিতে বিচারবিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এখন ওই মামলাতেই কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থীর একটি বাসস্থানে সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।