বসে খেলার সরঞ্জামের চাহিদা বেড়েছে লকডাউনে। ধর্মতলায় একটি দোকানে তাই সামনেই রাখা ক্যারম বোর্ড। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
এত দিন বেশির ভাগ দোকানদারই ক্যারম বোর্ড, ব্যাগাটেল, লুডোর মতো বসে খেলার সরঞ্জাম রাখতেন এক কোণে। কারণ, ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, টেবিল টেনিস র্যাকেটের কাছে বিক্রির নিরিখে গো-হারা হারত এই সব সরঞ্জাম। এ বার ওই অবহেলিতেরা সামনের সারিতে। ওরাই যে মালিকের ভরসা। সৌজন্যে অবশ্যই করোনা।
সংক্রমণের আতঙ্কে বন্ধ ফুটবল, ক্রিকেটের মতো বাইরের খেলা। ফলে ওই সব খেলার সরঞ্জামের চাহিদাতেও উল্লেখযোগ্য ভাবে ভাটা পড়েছে। তখন ক্যারম বোর্ড, লুডোই ব্যবসায়ীদের হাসি কিছুটা হলেও ধরে রেখেছে। এমনটাই মত ব্যবসায়ীদের।
কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আনলক ফেজ় ওয়ানে ১ জুন থেকে দোকান খুলেছে ঠিকই, কিন্তু বিক্রি প্রায় বন্ধ। লড়াইয়ের আশা টিকিয়ে রেখেছে ক্যারম, লুডো, দাবা। কলেজ স্ট্রিটের দোকানদার স্বপন দে বলেন, ‘‘টানা আড়াই মাস দোকান বন্ধ ছিল। খেলাধুলো সবই তো বন্ধ। তবু কিছু যদি বেচাকেনা হয় এই আশায় দোকান খুলছি। তবে দেখছি গত কয়েক দিনে বিভিন্ন আয়তনের দেড়শোটার মতো ক্যারম বোর্ড কিনেছেন অনেকে।’’ খেলার সরঞ্জামের পাশাপাশি রতন দাস বিক্রি করেন নানা মাপের ট্রফিও। রতনবাবু বলেন, ‘‘টুর্নামেন্টই তো বন্ধ। তাই ট্রফি বিক্রিও বন্ধ। অথচ এই সময়ে কত ট্রফি কিনতে ভিড় লেগেই থাকে দোকানে।’’ তাঁর দোকানেও বিক্রির ভরসা ক্যারম বোর্ড।
ধর্মতলার বিধান মার্কেটে সারি দিয়ে রয়েছে খেলার সরঞ্জামের দোকান। এক ব্যবসায়ী শেখ নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘এই সময় অন্য বার আইপিএল টুর্নামেন্ট হয়। কলকাতা নাইট রাইডার্স-সহ বিভিন্ন দলের জার্সির চাহিদা তুঙ্গে থাকে। আইপিএল-এর ধাঁচে পাড়ায় ক্রিকেট টুর্নামেন্টও হত অনেক। তাই ব্যাট, বল, উইকেটও বিক্রি হত প্রচুর।’’ নাসিরুদ্দিন জানাচ্ছেন, ক্যারম বোর্ড ছাড়াও এখন তাঁর দোকান থেকে শারীরচর্চার জিনিস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। জিম বন্ধ। যাতে বাড়িতে বসেও তাঁরা কসরত করতে পারেন সে কারণেই চাহিদা ওই সব জিনিসের।
বিক্রেতাদের কথায়, গ্রীষ্মে শুরু সাঁতারের মরসুম। এ বার বন্ধ সাঁতার। তাই বিক্রি নেই পোশাক-সহ সাঁতারের বিভিন্ন সামগ্রীর। বিধান মাকের্টের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের দোকান থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ডের বিক্রেতারা খেলার সরঞ্জাম কিনতে আসতেন। দেশ জুড়ে লকডাউন চলায় বন্ধ রয়েছে তা-ও।
করোনা পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা ভেবে বিক্রি সামগ্রীর তালিকায় বদল এনেছেন কোনও কোনও দোকানদার। বিধান মার্কেটের বি সি রায় মার্কেট স্টল হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধীন কয়েক জন ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, খেলার সরঞ্জামের পাশাপাশি তাঁরা রাখছেন মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার।