প্রতীকী ছবি।
শহর জুড়ে আতান্তরে ক্যানসার রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন ঘুরেও রেডিয়েশন জুটছে না। নতুন 'ডেট' পাওয়া দূরের কথা, মাঝপথেই রেডিয়েশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেকের। বেসরকারি হাসপাতালের বিপুল খরচের বোঝা বহন করা অধিকাংশের পক্ষেই অসম্ভব। ফলে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া পথ নেই অনেকের কাছেই।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোভিডের জন্য নির্দিষ্ট হওয়ায় অন্য একাধিক বিভাগের মতো সেখানেও থমকে ক্যানসারের চিকিৎসা। সেখানকার রোগীদের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেডিয়োথেরাপির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বার আর জি করের রেডিয়োথেরাপি বিভাগেরই এক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে থাকা অন্যদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের রেডিয়োথেরাপি বিভাগটি আদৌ সচল রাখা যাবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সমস্ত জায়গা জীবাণুমুক্ত করার সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রেডিয়োথেরাপি চিকিৎসা যাতে কোনও ভাবেই বন্ধ না হয়, সেই চেষ্টাও হচ্ছে। যদিও তা নিয়ে সন্দিহান বিভাগের চিকিৎসকেরাই। কারণ, এর আগে একাধিক বার শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কোনও ক্ষেত্রে হাসপাতালই বন্ধ করতে হয়েছে।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বর্তমানে অন্য হাসপাতালে রেডিয়োথেরাপি বন্ধ থাকায় সেখান থেকেও রোগীরা আসছেন। ফলে রেডিয়োথেরাপি বিভাগে প্রতিদিনই সাধারণ সময়ের তুলনায় একশো জন বেশি রোগী হচ্ছে। এতে শুধু যন্ত্রের উপরেই বাড়তি চাপ পড়ছে তা নয়, সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ান নিয়েও। শুধু রেডিয়োথেরাপিই নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, আর জি কর নন-কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্র হওয়ায় অন্য বিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে। তার মধ্যেই চিকিৎসকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে জটিল করেছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবারই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবর আসে। তার পরেই ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে যাঁরা ছিলেন, সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তালিকা তৈরি করে তাঁদেরও হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়। রবিবার আউটডোর বন্ধ থাকায় তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আজ, সোমবার কী হবে, সে চিন্তাই ভাবাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলছেন, ‘‘আমাদের অনুমান ওই চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত হননি। তিনি যেখানে কাজ করতেন সংশ্লিষ্ট ওই এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ হচ্ছে। তবে পরিষেবায় কোনও খামতি হবে না।’’
যদিও তা আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। সেই সঙ্গে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের অপ্রতুলতার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি অংশ করোনা পজ়িটিভ হওয়ার কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে নন-কোভিড হাসপাতালগুলি এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার বড় ভরসাস্থল, সেখানে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী কমে গেলে সামগ্রিক সমস্যা তৈরি হবেই।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিড বা নন-কোভিড হাসপাতালের কোথায়, কত জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে, সেই সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন হচ্ছে। তার পরেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু বার এমন করা হয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর। ক্যানসার রোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা সমাজকর্মী অনুপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে সমস্ত হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার কেন্দ্র হওয়ার কারণে রেডিয়োথেরাপি-সহ ক্যানসার সংক্রান্ত চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে, সেখানকার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে সাময়িক ভাবে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। তাতে রোগীদের ভোগান্তি কমবে।’’
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “৭৫ শতাংশ ক্যানসারের ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও সময়ে রেডিয়েশন নিতে হয়। এর নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মাঝপথে তা বন্ধ হওয়ার অর্থ চিকিৎসা প্রক্রিয়াটাই অসম্পূর্ণ থাকা।” ক্যানসার চিকিৎসক সুমন মল্লিকের কথায়, ‘‘রেডিয়েশন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। মাঝখানে ছেদ পড়লে রোগের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।”