কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখা করলেন লোরেটোর অধ্যক্ষ। নিজস্ব চিত্র।
লোরেটো কলেজকে ‘ইংলিশ মিডিয়াম’ বিতর্কের সমাধান বলে দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ভুল’ শোধরাতে ছাত্রীদের ভর্তি নেওয়ার জন্য আবার আবেদন গ্রহণ করতে বলা হল লোরেটো কর্তৃপক্ষকে। প্রকাশ করতে বলা হল নতুন মেধাতালিকাও। এই তালিকায় শুধু ইংরেজি মাধ্যম নয়, বাংলা-সহ সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছাত্রীদেরও সমান গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি, দরকার পড়লে কলেজের আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে লোরেটোকে।
সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে লোরেটোর ‘ইংলিশ মিডিয়াম’ বিতর্ক। ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়া না হলে লোরেটোয় ভর্তি হওয়া যাবে না—এই বার্তা দিয়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল লোরেটো কলেজ। সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। লোরেটো বলেছিল, বাংলা বা অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হবে না। তা নিয়ে পড়ুয়াদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, বাংলার কলেজ হয়ে লোরেটো বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ব্রাত্য করে কী করে। বিতর্কের আবহেই লোরেটো কলেজের অধ্যক্ষকে ডেকে পাঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
সেই তলব পেয়ে মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান লোরেটোর অধ্যক্ষ ক্রিস্টিন কুটিনহো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সেই বৈঠকেই সমাধান সূত্র দেওয়া হয় ক্রিস্টিনকে। জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশোধিত শর্তে (অর্থাৎ শুধু ইংরেজি মাধ্যম নয় বাংলা-সহ অন্য আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমের ছাত্রীরাও লোরেটোতে পড়ার সুযোগ পাবেন) নতুন করে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করতে হবে। প্রকাশ করতে হবে নতুন মেধাতালিকাও।
ইতিমধ্যেই বিতর্কিত শর্তে একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে লোরেটো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ওই মেধাতালিকার পাশাপাশি আরও একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। যে তালিকায় ইংরেজির মতোই অন্যান্য মাধ্যমের ছাত্রীরাও সমান গুরুত্ব পাবেন। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ছাত্রী নেওয়ার জন্য যদি আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হয়, তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় লোরেটোর আসনসংখ্যাও বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশের পর লোরেটোর অ্যাকাডেমিক অফিসার শর্মিলা মিত্র দেব বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা করছে, আমরা নতুন করে ভর্তি নেব।’’ একই সঙ্গে বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘যে হেতু ইংরেজিতেই ক্লাস হয়, তাই বহু ছাত্রীর তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়। অনেকে মাঝপথে ছেড়েও দেন। ফলে আসন নষ্ট হয়। আমরা কোনও বিভেদ করতে চাইনি। ছাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যা বদলানো হয়েছে।’’
অন্য দিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘ওঁরা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আমরা ওঁদের নতুন মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছি। প্রথম তালিকা বজায় রেখেই এই দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে।’’