তীব্র যাত্রী-ভোগান্তির অভিযোগকে সামনে রেখে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সারা দেশে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের মাত্র ২০ শতাংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়ে থাকে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকই। দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগই এখনও ডিজিটাল লেনদেনের আওতার বাইরে। এই পরিস্থিতিতেই কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ আচমকা সমস্ত টিকিট কাউন্টারে ১০০ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করতে চাইছেন। যার জেরে তীব্র যাত্রী-ভোগান্তির অভিযোগকে সামনে রেখে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ গত ১৯ নভেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর ১৫টি স্টেশনে দিনের বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা নগদ লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সময়ে যাত্রীরা শুধুমাত্র ইউপিআই অথবা অন্য কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে টিকিট কাটার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া, স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিনে নির্দিষ্ট মূল্যের টাকা ঢুকিয়ে টিকিট কাটা যাবে অথবা স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করা যাবে। প্রাথমিক ভাবে পাইলট প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে ২০ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
মেট্রো সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থা শুরু হওয়ার পরে টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীদের প্রবল ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। তার জেরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে তাঁদের মধ্যে। ইউপিআই এবং কিউআর কোড-নির্ভর ব্যবস্থায় যাত্রীদের একাধিক টিকিট কাটতে গিয়ে বার বার কোড স্ক্যান করতে হচ্ছে। স্টেশনের ভিতরে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে ভোগান্তি বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে এক নিত্যযাত্রীর অভিযোগ, ‘‘ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা একটা বিকল্প হতে পারে। কিন্তু, এ ভাবে জোর করে সেটি চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’’ আবার, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিনে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের অনেকে নগদ লেনদেন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে একাধিক স্টেশনে যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে কর্মীদের। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার যতীন দাস পার্ক স্টেশনে পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডিকেই যাত্রীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বলে খবর। তড়িঘড়ি আরপিএফ কর্মীরা তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে কালীঘাট স্টেশনের দিকে রওনা দেন। এক মেট্রো আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্যস্ত সময়ে যাত্রীরা কেউই এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করার অবস্থায় থাকেন না। ফলে কর্তারা সমস্যাগুলো জানতে পারেন না। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের গালমন্দ হজম করতে হচ্ছে আমাদেরই।’’
মেট্রো রেলের প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন অবিলম্বে এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কলকাতা মেট্রো চিফ অপারেশন্স ম্যানেজারকে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কর্মী সঙ্কটের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে মেট্রোয় কর্তাদের একাংশের স্বৈরাচার চলছে। ওই নির্দেশ প্রত্যাহার না হলে এ নিয়ে তীব্র আন্দোলনে যাব আমরা।’’ মেট্রো রেলওয়ে ওয়ার্কার্স কংগ্রেসের এক নেতা জানান, ডিসেম্বরে ইউনিয়নের নির্বাচনের পরে এ নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে যাবেন। মেট্রোর বাম কর্মী ইউনিয়নও ওই নির্দেশের বিরোধিতা করেছে বলে খবর।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য শনিবার জানিয়েছেন, ডিজিটাল লেনদেনে বিপুল সাড়া মিলছে। প্রায় ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন ওই ভাবে হচ্ছে। যদিও অন্য একটি সূত্রের খবর, বিভিন্ন স্টেশনে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কাউন্টার সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ওই পদ্ধতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে মেট্রো
সূত্রের খবর।