কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
করোনা-পর্বে অনেকেরই ভরসা ছিল সে। সামলেছে কঠিন সব পরিস্থিতি। কিন্তু এখন করোনামুক্ত হলেও নিজেই বিভিন্ন ‘রোগে’ আক্রান্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লক (এসএসবি)! উন্নত ‘চিকিৎসা’ দিয়ে সেই ব্লককে পুরোপুরি চাঙ্গা করতে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে প্রয়োজনীয় অর্থের অনুমোদন মিলবে, এখন তারই অপেক্ষায় এসএসবি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ নম্বর গেটের কাছেই দশতলা ঝাঁ-চকচকে বহুতল। সেটিই এসএসবি। রাজ্যে করোনার হামলা শুরু হওয়ারও মাস পাঁচেক আগে সেখানে পরিষেবা চালু হয়েছিল। স্থির হয়েছিল, গ্যাস্ট্রো মেডিসিন, গ্যাস্ট্রো সার্জারি, ইউরো সার্জারি, নেফ্রোলজি, জেরিয়াট্রিক মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, নিউরো সার্জারি এবং এন্ডোক্রিনোলজি-র সুপার স্পেশ্যালিটি পরিষেবা ওই ব্লকে মিলবে। এ ছাড়াও ওই ব্লকে ছ’টি অপারেশন থিয়েটার, ৩৫০টি শয্যা এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট রয়েছে। পাশাপাশি নয় ও দশতলায় রয়েছে কেবিন। এই সমস্ত পরিকল্পনা নিয়ে এসএসবি চালু করার পরেই রাজ্যে আছড়ে পরে কোভিড। জানা যাচ্ছে, তখন ওই গোটা বাড়িটাই করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
সূত্রের খবর, টানা দু’বছর পরে কোভিড কমে গেলেও এসএসবি-র পরিকাঠামোগত বিবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও ফল্স সিলিং ভেঙে পড়েছে। কোথাও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। কোথাও আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে সমস্যা। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের (পিএম কেয়ার) টাকায় ওই ভবন তৈরি হওয়ায় চটজলদি সেটির সংস্কারের কাজও শুরু করতে পারছে না পূর্ত দফতর। বন্ধ হয়ে রয়েছে কেবিনগুলিও। আবার পর্যাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসক না থাকায় পুরোদমে সমস্ত সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগ চালু করা যায়নি। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পুরোদমে চালু হলে সামাল দেওয়া মুশকিল হবে। পুরোপুরি চালু করার আগে আরও চিকিৎসক যেমন দরকার, তেমনই পর্যাপ্ত নার্সেরও প্রয়োজন রয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারও চাইছে, এসএসবি পুরোদমে চালু করতে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুরোটাই সংস্কার করতে হবে, তেমনটা নয়। কিছু জায়গায় প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ হবে।’’ পিজি-র উডবার্নের মতোই দৈনিক দু’হাজার টাকায় ভাড়া পাওয়া যাবে এসএসবি-র ডিলাক্স কেবিন। ২৬টি কেবিনের প্রতিটি ৩০০ বর্গফুটের। দু’টি বরাদ্দ হবে পড়ুয়াদের জন্য। তাঁদের কোনও টাকা দিতে হবে না। আর দু’টি ব্যবহৃত হবে চিকিৎসক ও নার্সদের ঘর হিসাবে। বাকি ২২টি ভাড়ায় মিলবে। যার একটি ভিভিআইপি কেবিন।
চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, শুধু কেবিন চালু করে লাভ নেই। তার আগে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের প্রয়োজন। তবে তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, সুপার স্পেশ্যালিটির স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ুয়া তেমন হচ্ছে না। আর যে ক’জন আসছেন, তাঁরাও পাশ করে বেসরকারিতে চলে যাচ্ছেন। আবার, বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা মেডিক্যাল কলেজেও শিক্ষক-চিকিৎসক পাঠাতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসকের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘চিকিৎসক কম ঠিকই। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। কিন্তু যে ক’জন রয়েছেন, তাঁদেরও আরও উদ্যোগী হতে হবে।’’
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের পিছিয়ে পড়া অঞ্চল উন্নয়নের টাকায় তৈরি এই সুপার স্পেশ্যালিটি কেন্দ্রগুলির বেশির ভাগ জায়গায় স্পেশ্যালিটি পরিষেবাই চালু হয়নি। পুরনো হাসপাতালের কিছু বিভাগ স্থানান্তরিত করে সুপার স্পেশ্যালিটি নাম দিয়ে চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা না করে শুধু বাড়ি বানিয়ে পরিষেবা দেওয়া যায় না। এতে জনগণের করের টাকায় কেনা যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হয়।’’