রায় শোনার পরে আইনজীবীর সঙ্গে তপন দত্তের স্ত্রী-কন্যা, প্রতিমা ও প্রিয়াঙ্কা দত্ত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
মাঝখানে ১১টা বছর। যে জলাভূমি ভরাটকে কেন্দ্র করে বিবাদ, প্রতিবাদ ও খুন, সেখানে এখন মাথা তুলেছে হোসিয়ারি পার্ক। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় পরে এই নির্দেশে খুশি বালির নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত ও তাঁর দুই মেয়ে। সকলেই বলছেন, ‘‘এ বার আর কেউ ছাড় পাবে না। সিবিআইয়ে আস্থা আছে আমাদের।’’
২০১১ সালের ৬ মে, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সাত দিন আগে খুন হন বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। সেই রাতে বাবলু প্রসাদ নামে একসঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তপন। বালির লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে তাঁকে। চম্পট দেয় বাবলু। হাওড়া জেলা পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও পরেতদন্তভার নেয় সিআইডি। প্রতিমা বলেন, ‘‘১০ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করি। তাতে জেলার প্রভাবশালী কয়েক জন নেতাও ছিলেন। কিন্তু প্রভাব খাটিয়েসকলেই বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’
প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি-ও নিশ্চিত ছিল যে, খুনের নেপথ্যে রয়েছে জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ২০১১-র ৩০ অগস্ট সিআইডি প্রথম চার্জশিট দেয়। তাতে হাওড়ার কয়েক জন তৃণমূল নেতা-সহ ১৬ জনের নাম ছিল। যার মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং পি রাজু ও সন্তোষ সিংহ নামেদু’জনকে পলাতক দেখানো হয়। সে বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘সাপ্লিমেন্টারি’ চার্জশিট দেয় সিআইডি। তাতে কোনও কারণ না দেখিয়েই যে ন’জনের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাঁরা প্রত্যেকেই জেলার নেতা। পরবর্তী সময়ে অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হয় সন্তোষ সিংহ। পি রাজু আজও অধরা। এ দিন প্রতিমা বলেন, ‘‘১১ বছর ধরে এক জনকে ধরতে পারেনি পুলিশ। খুবই বিস্ময়কর।’’ সিআইডি দ্বিতীয় চার্জশিট দিতেই তাঁরা সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে যান।
এ দিন আদালতের নির্দেশ শুনে কেঁদে ফেলেন তপনের বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। বললেন, ‘‘এই দিনটার জন্যই লড়াই করেছি। এ বার দোষীরাসকলে শাস্তি পাবে।’’ ২০১৪ সালে হাওড়া আদালত ধৃত পাঁচ জনকেই বেকসুর খালাস করে। প্রতিমার অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রথমে প্রলোভন দেখানো হল। কাজ না হওয়ায় খুনের হুমকি। নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই হাল ছাড়িনি। আজও ছাড়ব না। দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’’
শাসকদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তপন ও প্রতিমা, দু’জনেই। কিন্তু খুনের ঘটনার পরে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন বলে জানাচ্ছেন প্রতিমা। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ডোমজুড়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। প্রতিমা বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা কখনও ডিভিশন বেঞ্চ, কখনও সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলা দীর্ঘায়িত করেছে। তাই শেষে সিঙ্গল বেঞ্চে গিয়ে আবেদন করি। সেখান থেকেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ মিলল।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।