কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
আদালতে মামলা চলছে। বছর নয়েকের কন্যাসন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মা। সেই দিকে চোখ যেতেই বিচারপতি রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্বরে ওই মহিলা এবং তাঁর আইনজীবীরউদ্দেশে বলেন, ‘‘শিশুটিকে নিয়ে কোর্টে এসেছেন কেন? শিশুকে দেখিয়ে কি আদালতের রায় নিজের পক্ষে আনতে চাইছেন?’’
সোমবার এমন ঘটনা ঘটেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। আদালত সূত্রের খবর, ওই শিশুটির মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার ঠাকুরমা। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে এবং তাঁর ছেলেকে পুত্রবধূ ফ্ল্যাট থেকে বার করে দিয়েছেন। অথচ বরাহনগরের ওই ফ্ল্যাট তাঁর ছেলের নামে ছিল। বর্তমানে তিনি এবং ছেলে একটি বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়ে কোনও সুরাহা পাননি। তাই আদালতেরদ্বারস্থ হয়েছেন।
আদালত সূত্রের খবর, শাশুড়ি ও বৌমার এই চিরাচরিত সমস্যা নিয়ে বহু মামলা হয় নিম্ন ও উচ্চ আদালতে। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছুই নেই। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অবহেলা নিয়েও প্রচুর মামলা দায়ের হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অশক্ত, অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির প্রতি অবিচারের ছবি ফুটে ওঠে। আদালতও অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানদের বাধ্য করে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল হতে। কিন্তু, এই ধরনের মামলায় সন্তানকে নিয়ে আদালতে এক পক্ষের হাজির হওয়ার ঘটনার বিরল বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
শিশু মনোবিদ উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ন’বছর বয়স মানে মেয়েটির অনেকটাই বোধবুদ্ধি হয়েছে। আদালতে সর্বসমক্ষে তারপরিচিতদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হতে পারে। কিন্তু তার মন এতটাও পরিণত হয়নি যে, পুরো পরিস্থিতি বিচার করে সেটি সে গ্রহণ করতে পারে।’’ এ দিনবিচারপতি বলেন, ‘‘কোর্টে কোনও শিশুকে আনলে তার মানসিক অবস্থার উপরে কী প্রভাব পড়ে, তা আপনারা বোঝেন? আইনজীবীর বক্তব্যে বিচারপতিকে সন্তুষ্ট করাই কিকাম্য নয়?’’
এ দিন মামলাকারীর আইনজীবী সুস্মিতা দে বসু এবং হারাধন মণ্ডলের আর্জি ছিল, তাঁদের মক্কেলদের ওই ফ্ল্যাটে যেন ঢুকতে দেওয়া হয়। বিচারপতি সেনগুপ্তের নির্দেশ, মামলাকারীর ছেলেকেও পরের শুনানিতে হাজির থাকতে হবে।