Calcutta High Court

জন্মের শংসাপত্রে বাবার পরিচয় বদলের নির্দেশ হাই কোর্টের

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, শিশুটির যা বয়স, তাতে সে জন্মদাতা পিতা এবং সৎবাবার পার্থক্য বোঝে না। তাই সে ছোট থেকে সৎবাবাকেই ‘বাবা’ হিসেবে চিনে বড় হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:১২
Share:

বিচারপতি অমৃতা সিংহ। —ফাইল চিত্র।

সমাজের বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনকেও নমনীয় হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

সম্প্রতি একটি শিশুর জন্মের শংসাপত্রে বাবার পরিচয় বদলের মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ উঠেছে বিচারপতি অমৃতা সিংহের রায়ে। বিচারপতি জানিয়েছেন, মানুষের স্বার্থেই আইনের ব্যবহার হওয়া উচিত।

যেখানে বৃহত্তর জনজীবন জড়িত নয়, সেখানে আইনের অহেতুক জটিলতাকে সরিয়ে রাখাই কাম্য। এই পর্যবেক্ষণের সপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখও করেছেন তিনি।

Advertisement

আদালত সূত্রের খবর, নবদ্বীপের বাসিন্দা এক মহিলা তাঁর সন্তানের জন্মের শংসাপত্রে পিতৃ পরিচয় বদলাতে চেয়েছিলেন।

পুরসভা তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় তিনি হাই কোর্টে মামলা করেন।

ওই মহিলার আইনজীবী জয়ন্ত সামন্ত, করুণাময়ী সামন্ত, রাজদীপ অধিকারী কোর্টে জানান, প্রথম বিয়ের সূত্রে মহিলার ওই সন্তান হয়েছিল।

২০২১ সালে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং পরবর্তী কালে তিনি ফের বিয়ে করেন।

দ্বিতীয় স্বামী মহিলার প্রথম পক্ষের সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে শিশুটির জন্মের শংসাপত্রে তার জন্মদাতা পিতার নাম, পরিচয় রয়ে গিয়েছে। শংসাপত্রে পিতৃ পরিচয় বদলের ক্ষেত্রে মহিলার প্রথম স্বামীর আপত্তি নেই।

যদিও পুরসভার দাবি, জন্মের শংসাপত্রের আইন অনুযায়ী, এক বার তথ্য নথিভুক্ত হলে বদলানো সম্ভব নয়।

দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি সিংহ অবশ্য জানান, ওই আইনে তথ্য সংশোধনের উপায় বাতলানো আছে। শিশুটির পিতৃ পরিচয় সেই অনুযায়ী বদল করা সম্ভব। সেই নিয়মেই ১৪ মার্চের মধ্যে ওই সংশোধন করে নতুন শংসাপত্র দিতে হবে পুরসভাকে।

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, শিশুটির যা বয়স, তাতে সে জন্মদাতা পিতা এবং সৎবাবার পার্থক্য বোঝে না। তাই সে ছোট থেকে সৎবাবাকেই ‘বাবা’ হিসেবে চিনে বড় হবে।

তার পরেও যদি সে জন্মের শংসাপত্রে অন্য মানুষের নাম পিতৃ পরিচয় হিসেবে খুঁজে পায়, তা হলে বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে এবং সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে।

এ দেশে প্রত্যেক মানুষের সম্মান এবং সম্ভ্রম নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে।

সেই অধিকার সুরক্ষিত করতেই শংসাপত্রে ওই পরিবর্তন জরুরি।

এই পরিবর্তনের সপক্ষেই বিচারপতি সিংহের পর্যবেক্ষণ, জন্মের শংসাপত্র ব্যক্তির বংশ, নাগরিকত্ব, বয়স বিষয়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এই শংসাপত্রকে ‘অভ্রান্ত’ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

তাই শংসাপত্রের আইনে কড়াকড়ি আছে। কিন্তু ভেবে দেখা প্রয়োজন, সেই আইন যখন তৈরি হয়েছিল তখন সমাজের গড়ন ভিন্ন ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে বদল এসেছে এবং বর্তমানে অনেকেই অসুখী দাম্পত্য থেকে বেরিয়ে নতুন ভাবে বাঁচার পথ খুঁজছেন। সেখানে পুরনো সম্পর্কের ভার বহন সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এই সমস্যার সমাধানে আইনকে সচল এবং পরিবর্তনশীল হওয়া উচিত।

তবে জন্মের শংসাপত্রে শিশুটির জন্মদাতা পিতার নাম মুছে দেওয়া হলেও বিচারপতি সিংহ তাঁর রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে জন্মদাতা পিতার সম্পত্তির উপরে শিশুটির অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement