প্রতীকী ছবি
যাত্রী সেজে অ্যাপ-ক্যাবে উঠেছিল দুষ্কৃতীরা। চালক কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছন থেকে তিরের ফলা জাতীয় ধারালো কোনও অস্ত্র তাঁর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল তারা। এর পরে বৃষ্টির রাতে শুনশান রাস্তায় রক্তাক্ত ক্যাবচালককে ফেলে দিয়ে তাঁর গাড়ি, নগদ টাকা ও ফোন নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ২৩ জুলাই রাজারহাট থানা
এলাকায় ঘটেছিল সেই ঘটনা। গুরুতর জখম সেই চালকের মাথায় অস্ত্রোপচার করে তিরের ফলা বার করল এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিভাগ।
অমরনাথ ঠাকুর নামে ওই ক্যাবচালকের স্ত্রী টগরি ঠাকুর বুধবার সেই ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা শিউরে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট। সে দিন রাত আড়াইটে নাগাদ নিউ টাউনের আকাঙ্ক্ষা মোড় থেকে রাজারহাট চৌমাথা মোড় পর্যন্ত যাওয়ার জন্য একটি বুকিং পান অমর। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দুই যুবক তাঁর গাড়িতে ওঠে। অমরের বাড়ি রাজারহাটের ছোট চাঁদপুর গ্রামে। দুই সওয়ারিকে গন্তব্যে পৌঁছে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। টগরি জানান, সেই রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল। চৌমাথার মোড়ে পৌঁছনোর পরে গাড়ির দুই সওয়ারি অনুরোধ করে, একটু এগিয়ে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। এরই মধ্যে ক্যাব থামিয়ে তৃতীয় এক জন গাড়িতে উঠে পড়ে বলে অভিযোগ। দু’জনের বুকিং থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় ব্যক্তি কী ভাবে গাড়িতে উঠে পড়লেন, তা স্পষ্ট হয়নি। টগরি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর গলায় একটা রুপোর চেন ছিল। হাড়োয়া খালের কাছে গাড়ি থামিয়ে পিছন থেকে সেই চেনে টান মেরে মাথার মধ্যে তীক্ষ্ণ কিছু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে ওকে রাস্তায় ফেলে গাড়ি, দুটো ফোন, নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।’’
আক্রান্তের পরিবার সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলের কাছে একটি মাছের আড়ত রয়েছে। জ্ঞান ফিরলে মাথার মধ্যে তিরের ফলা ঢোকা অবস্থায় টলতে টলতে সেখানে যান অমর। কোনও মতে স্ত্রীর নম্বরটুকু স্থানীয় বাসিন্দাদের বলতে পেরেছিলেন তিনি। এর পরে টগরির সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেখানকার লোকজন। জখম অমরকে রেকজোয়ানি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তাঁরা।
এসএসকেএম সূত্রের খবর, তিরের ফলার মতো অস্ত্রটির বাইরের অংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা কেটে বাদ দিলেও মাথার ভিতরে দেড় ইঞ্চির মতো অংশ ঢুকে ছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে রোগীর পরিজনদের কিছু জানাননি বলে অভিযোগ। পরদিন বারাসত হাসপাতালে সিটি স্ক্যান হয় অমরের। তাঁকে কোনও মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ২৪ জুলাই রাতে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার বিভাগে অমরকে নিয়ে যাওয়া হলে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। এর পরে নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শুভাশিস ঘোষের নেতৃত্বে পিজিটি অলোক নাথ-সহ চিকিৎসকদের একটি দল অস্ত্রোপচার করে অমরের মাথা থেকে তিরের ফলা বার করেন।
শুভাশিসবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ওই যুবক এখন বিপন্মুক্ত। তাঁর মস্তিষ্কের প্যারাইটোঅক্সিপিটাল অঞ্চলে আঘাত লেগেছিল। যার ফলে ভিতরের একটি হাড় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরে সেখানে একটি টাইটেনিয়াম প্লেট বসানো হবে। মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য পরে একটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আপাতত রোগী সুস্থ রয়েছেন। দু’-এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।’’
এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও যে তৎপরতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করে রোগীর পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো গিয়েছে, সেটাই সব চেয়ে বড় সাফল্য।’’