প্রতীকী ছবি।
রাস্তার বাঁক ঘুরতে গিয়ে নিজের আসন থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান সরকারি বাসের চালক। অল্প সংখ্যক যাত্রী থাকা বাসটিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে গিয়ে ধাক্কা মারল রাস্তার ধারের একটি গাছে। রবিবার সকালে ময়দান থানা এলাকার ওই ঘটনায় যাত্রীরা রক্ষা পেলেও রাস্তায় পড়ে যাওয়া গুরুতর জখম বাসের চালককে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মঙ্গল মণ্ডল (৪০) নামের ওই চালকের মাথায় গুরুতর চোট লেগেছিল। অত্যধিক রক্ত ক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল ময়দান থানার অন্তর্গত হওয়ায় সেখানে একটি পথ দুর্ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বাসিন্দা ওই বাসচালকের পরিবারের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। ঠাকুরপুকুর ডিপোর অধীনে রাজ্য পরিবহণ নিগমের নিজস্ব চুক্তি ভিত্তিক কর্মী ছিলেন মঙ্গল। ময়দান থানার পাশাপাশি এ দিনের ঘটনার তদন্ত করছেন লালবাজারের ফ্যাটাল স্কোয়াডের তদন্তকারীরাও। তবে কী ভাবে ওই চালক পড়ে গেলেন তা নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তদন্তকারীরা।
পুলিশের একটি অংশের যদিও দাবি, বাস চালানোর সময়ে ওই চালক সম্ভবত কোনও ভাবে নিজের দিকের দরজা ‘লক’ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। হয়তো সেই কারণেই বাঁক ঘোরার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান তিনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দেখেছে, বাসটির চালকের দিকের দরজার কলকব্জা সব ঠিকই রয়েছে। ফলে দরজা ভেঙে তাঁর পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানায়, রাস্তার আগের মোড়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে থেকে দেখার চেষ্টা হচ্ছে কোনও জায়গায় নিজের দিকের দরজা খুলে ওই চালক নেমেছিলেন কি না।
পুলিশ সূত্রের খবর, সরকারি বাসটি এস-৪সি রুটের। হাওড়া থেকে হরিদেবপুর যাওয়ার সময়ে পার্ক স্ট্রিট স্টপেজে পৌঁছনোর আগে দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ডাফরিন রোড থেকে উট্রাম রোডের দিকে বাসটি ঘুরছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, সেই সময়ে বাসের গতিবেগ ছিল ২৫ কিলোমিটার ঘণ্টায়। ফুটেজে দেখা যায়, হঠাৎ বাসটির চালকের আসন থেকে পড়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। এর পরে বাসটি সরাসরি রাস্তার বাঁ দিকে ঢুকে গিয়ে একটি গাছে ধাক্কা মারছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসের যাত্রীদের মধ্যে থেকেই এক জন কাছে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে ডেকে আনেন। তিনিই খবর দেন ময়দান থানায়। পুলিশ জানায়, বাসে আট জন যাত্রী ছিলেন। চালক-সহ সকলকেই এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হলেও চালককে মৃত ঘোষণা করা হয়।
হাসপাতালেই এক যাত্রী বলেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগে জোরে ঝাঁকুনি হল। বাসটা সরাসরি গাছে গিয়ে ধাক্কা মারল। যাত্রীদের মধ্যেই এক জন বেরিয়ে দেখলেন চালক গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছেন।’’ এর পরে ওই যাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘বাঁক ঘোরার সময়ে বাসের গতি কম ছিল। গতি বেশি থাকলে কী হত!’’
তবে কি বাস চালানোর নিরাপত্তাবিধি মানেননি ওই চালক?
পরিবহণ দফতরের কেউই এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। এক আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের ইতিহাসে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। ওই সময়ে চালক কোনও ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টের পরেই সবটা বোঝা যাবে।’’