ঘুড়িই কাল হল ছোট্ট রেহানের। প্রতীকী ছবি
পাশের বাড়ির ছাদের কাছে আটকে থাকা একটা ঘুড়ির দিকে নজর ছিল দু’-তিন দিন ধরে। সেই ঘুড়ি নিয়ে পরিবারের কাছে বায়নাও জুড়েছিল বছর দশেকের মহম্মদ রেহান। কিন্তু সেই ঘুড়িই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝতে পারেনি সে। সকলের অজানতে ওই ঘুড়ি পাড়তে গিয়েই বিদ্যুতের হাইটেনশন তারে হাত লেগে যায় তার। বুধবার ঘটনাটি ঘটে আনন্দপুরের মার্টিন কলোনিতে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নাবালকের। শোকস্তব্ধ পরিবারের আক্ষেপ, ‘‘কেন বায়না মেটাতে অন্য ঘুড়ি কিনে এনে দেওয়া হল না! তা হলে হয়তো...।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে আনন্দপুর থানায় খবর আসে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই থানা এলাকার এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত তদন্তকারী অফিসারেরা হাসপাতালে ছোটেন। সেখান থেকে মৃতের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দেখা যায়, মার্টিন কলোনির ঘিঞ্জি বস্তির একটি ঘরে মা-বাবা, দাদার সঙ্গে থাকত রেহান। ওই বাড়িটির পাশেই একটি দোতলা বাড়ির উপরে উঠে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে বলে জানান
প্রতিবেশীরা। পুলিশ গিয়ে দেখে, পাঁচিলের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। তার উপর দিয়েই গিয়েছে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার। সেই তার থেকেই ঝুলছে ছেঁড়া ঘুড়ি। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘কখন সকলের অজানতে ছাদে উঠে গিয়েছিল রেহান। ঘুড়ি ধরতে গিয়ে হাত লেগে যায় বিদ্যুতের হাইটেনশন তারে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সে নীচে পড়ে।’’ বুধবার রাত ৯টা এই ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশীরাই রেহানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তখনও বেঁচে ছিল রেহান। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমে। সেখানেই এ দিন দুপুরে মৃত্যু হয় তার।
পুলিশ সূত্রের খবর, রেহানের মা বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা অটো চালান। তার দাদা এলাকার একটি কারখানায় কাজ করেন। রেহান দাদার কাছেই ঘুড়ি পেড়ে দিতে বলেছিল। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলেও রেহানের মা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তিনি বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। রেহানের বাবা মহম্মদ সাকির বলেন, ‘‘ছেলে অত্যন্ত দুরন্ত ছিল। সর্বক্ষণ ওকে চোখে চোখে রাখতে হত। তার মধ্যেও যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ভাবতে পারিনি। কয়েক দিন ধরেই ঘুড়ির নেশা এমন ভাবে পেয়ে বসেছিল যে, সারা দিন ঘুড়ি কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করত। কাকে দোষ দেব? ওর বায়না না মেটাতে পারার জন্য নিজেদের?’’
পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার অপেক্ষা করছে। এক তদন্তকারীর মন্তব্য, ‘‘গুলশন কলোনি, মার্টিন কলোনি জুড়ে বিদ্যুতের তারের গা ঘেঁষে এমন বহু বাড়ি উঠেছে। বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটলেও থানায় কেন জানানো হয়নি, সেটা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।’’