arrest

শিশুকে খুনে বাবা ধৃত, চড় মারাতেই মৃত্যু?

পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, ঘটনার দিন বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে একাই ছিল সে। রোহনের মাকাজে গিয়েছিলেন। দুপুরের পরে বিজয় মদ্যপান করতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
Share:

জেরায় বিজয় জানিয়েছে, চড় খেয়ে প্রথমে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় রোহন। প্রতীকী ছবি।

মদ্যপান করছিল বাবা। সে সময়ে তার কাছে বছর তিনেকের ছেলে শৌচাগারে যাওয়ার কথা বললেও তাকে একাই যেতে বলেছিল ওই ব্যক্তি। কিন্তু ছেলে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে ছেলেকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে সজোরে চড় মারে বাবা। তার জেরেই দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রথমে অজ্ঞান এবং পরবর্তী কালে মৃত্যু হয় শিশুটির। সপ্তাহখানেক আগে আনন্দপুরের নোনাডাঙায় রোহন বড়ালের (৩) রহস্য-মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তকে জেরা করে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

ওই শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় তার দিদিমার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়েছে বাবা বিজয় বড়ালকে (২৫)। পুলিশের দাবি, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে গোটা ঘটনার কথা স্বীকার করেছে সে। ধৃতকে রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘অভিযুক্ত মত্ত অবস্থায় সন্তানকে মারার পরে স্ত্রীকে ফোন করে ডেকেছিল। কিন্তু তাঁকে ছেলের মৃত্যুর কথা জানায়নি। কী কারণে এমন ঘটেছিল তা জানতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। তাই পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হচ্ছে।’’ তা শুনে বিচারক বিজয়কে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, ঘটনার দিন বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে একাই ছিল সে। রোহনের মাকাজে গিয়েছিলেন। দুপুরের পরে বিজয় মদ্যপান করতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রোহন শৌচাগারে যাওয়ার কথা বললে তাকে একাই যেতে বলে বিজয়। কিন্তু তাতে রোহন কান্নাকাটি শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ পরেও কান্না না থামায় ‘বিরক্ত’ বিজয় ছেলেকে টেনে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে সজোরে চড় মারে।

Advertisement

জেরায় বিজয় জানিয়েছে, চড় খেয়ে প্রথমে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় রোহন। কিন্তু ছেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে শৌচাগারেই ফেলে রেখে কিছু সময়ের জন্য বেরিয়ে যায় সে। পরে বাড়ি ফিরেরোহনকে একই ভাবে পড়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে, সে মারা গিয়েছে। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ছেলের মৃত্যু হয়েছে বুঝে স্ত্রীকে ফোন করে বিজয়। স্ত্রী ফেরার আগেই ছেলের শরীরে কিছু সময় ধরে তেল মালিশও করে। এর পরে রোহনের মা বাড়ি ফিরলে তাঁর কাছে বালতির জলে ছেলের পড়ে যাওয়ার গল্প ফাঁদে। এর পরে দেহটি তার ঠাকুরমার কাছে নিয়ে গিয়ে সারা রাত রেখে দেয়। পরের দিন সকালে কবরস্থ করা হয় রোহনকে। ধৃতকে জেরা করে বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বালতি এবং বেশ কিছু ওষুধ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঘটনার দিন দুয়েক পরে নাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জীবনতলার বাসিন্দা, রোহনের দিদিমা মিনা বিবি। বিজয়ের বিরুদ্ধে নাতিকে খুনের সরাসরি অভিযোগ করেন তিনি। সেই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করে আনন্দপুর থানার পুলিশ। মৃত্যুর কারণ জানতে গত বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট এবং দিদিমার উপস্থিতিতে কবরস্থ শিশুটির দেহ তুলে এনে ময়না তদন্ত করা হয়। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ জানানো না হলেও মাথার পিছনে এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে জানানো হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে খোঁজ ছিল না বিজয়ের। শনিবার রাতে তিলজলা এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়।

কিন্তু এমন ঘটনা ঘটল কেন? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘এমন ঘটনার পিছনে আসলে কাজ করে ছোটদের শাসন করার প্রবণতা। কিন্তু শাসন করতে গিয়ে অপরাধ সংঘটিত হলে পরবর্তী কালে নিজেকে বাঁচাতে একাধিক কৌশল নেওয়ার প্রবণতা কাজ করে। যা অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement