প্রতীকী ছবি।
ঋণ দানকারী দুই সংস্থার মধ্যে ব্যবসায়িক কারণে গোলমাল। সেই রাগ থেকেই একটি সংস্থার মালিককে ফাঁসিয়ে দিতে অটোর ভিতরে বোমা রেখে দেওয়া হয়েছিল বলে খবর। শুধু তা-ই নয়, বোমা রাখার চার দিন পরেও তা পুলিশের নজরে না আসায় অভিযুক্তেরা নিজেরাই পরিকল্পনা করে থানায় খবর দিয়েছিল। হরিদেবপুরে অটোর ভিতর থেকে বোমা, গুলি এবং বন্দুক উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই ঘটনায় রবিবার চার জনকে গ্রেফতার করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম ভৈরব বসু, স্বপন মিত্র, বাবলু দলুই ওরফে সোনু এবং অজিত দাস। এ দিন তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তবে চার জন ধরা পড়লেও প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল পরিমাণ বোমা এবং অস্ত্র নিয়ে আসা হলেও তা পুলিশের নজরে পড়ল না? অভিযুক্তেরাই বা এত সহজে অস্ত্র জোগাড় করল কোথা থেকে?
জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর থানার পঞ্চাননতলা রোডে একটি ঋণ দানকারী সংস্থার মালিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাদ ছিল অভিযুক্ত ভৈরবের। ভৈরবও একটি ঋণ দানকারী সংস্থা চালায়। এই বিবাদের কারণেই সে বিশ্বজিৎকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, এক ব্যক্তি বিশ্বজিতের সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না করায় সম্প্রতি তাঁর অটোটি বাজেয়াপ্ত করে পঞ্চাননতলা রোডে নিজের গ্যারাজে তুলে এনেছিলেন বিশ্বজিৎ। বিষয়টি চোখে পড়তেই ‘সুযোগ’ কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে ভৈরব। এর জন্য প্রথমে স্বপনকে সঙ্গে নেয় সে। দু’জনে মিলে ওই অটোর মধ্যে বোমা এবং অস্ত্র রেখে দেওয়ার ছক কষে। বোমা এবং অস্ত্র জোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবলু এবং অজিতকে। এমনকি বোমা তৈরির মশলা আনতে ভৈরব মোটা টাকা খরচ করেছিল বলেও জেনেছে পুলিশ।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, পরিকল্পনা মতো বোমাগুলি বানিয়েছিল অজিত। আর অটো থেকে উদ্ধার হওয়া বন্দুকটি জোগাড় করেছিল স্বপন নিজে। বন্দুক হাতে পাওয়ার পরে সেটি অজিতকে দিয়ে দেয় সে। ১৯ এপ্রিল রাত তিনটে নাগাদ একটি নাইলনের ব্যাগে ওই বোমা ও বন্দুক ভরে মোটরবাইকে চেপে বিশ্বজিতের গ্যারাজে আসে স্বপন ও বাবলু। এর পরে অটোর মধ্যে বোমা ভর্তি ব্যাগ রেখে চম্পট দেয়।
তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রথমে স্বপন ও বাবলুকে চিহ্নিত করে পুলিশ। রবিবার ভোরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে জানা যায় ভৈরব ও অজিতের নাম। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আরও জেনেছে, গত শনিবার তাদের মধ্যে এক বা একাধিক জন ফের ওই গ্যারাজে যায়। দেখা যায়, বোমা ভর্তি ব্যাগটি আগের অবস্থাতেই পড়ে আছে। সূত্রের খবর, এর পরেই তারা পুলিশকে গিয়ে বলে, অটোয় মাদক রাখা আছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তল্লাশি চালিয়ে বোমা ও বন্দুক ভর্তি ব্যাগটি উদ্ধার করে।
তবে শুধুমাত্র বিশ্বজিৎকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই বোমা এবং অস্ত্র রাখা হয়েছিল, না কি এর পিছনে ধৃতদের আরও বড় পরিকল্পনা ছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে কয়েকটি গাড়ির কাগজপত্রের জন্য ভৈরবকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে কাজ তো করে দেয়নি, টাকাও ফেরত দিচ্ছিল না। তা নিয়েই ওর সঙ্গে আমার ঝামেলা চলছিল।’’
কিন্তু অভিযুক্তেরা বাইকে করে অস্ত্র এবং বোমা নিয়ে এল, সেগুলি অটোয় চার দিন ধরে পড়ে রইল— কিছুই পুলিশের নজরে পড়ল না? এই প্রশ্নই তুলছেন স্থানীয়েরা। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকালে এবং বিকেলে বহু লোক যাতায়াত করেন এই এলাকায়। বিকেলে পাড়ার বাচ্চারা খেলাধুলো করে। জনবহুল এলাকায় দিনের পর দিন বোমা পড়ে থাকল, কিন্তু তা পুলিশের নজরে পড়ল না, এই বিষয়টিই আমাদের ভাবাচ্ছে।’’
এ ব্যাপারে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নিয়মিত নাকা তল্লাশি চলে। থাকে ক্যামেরার নজরদারিও। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’