বাবুইয়ের বাসা ঘিরে বেহালায় বোমাতঙ্ক

বোমা! বোমা! বোমা! বেলা গড়াতে না গড়াতেই হইচই বেহালার মিত্র কলোনিতে। রাস্তায় পড়ে খয়েরি রঙের বস্তু। ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে একটি তার, বেরিয়ে আছে দু’টো মুখ। বোমা তো এ রকমই হয়। ওই রাস্তা দিয়ে লোকজনের যাতায়াত কার্যত বন্ধ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
Share:

বোমা!

Advertisement

বোমা! বোমা!

বেলা গড়াতে না গড়াতেই হইচই বেহালার মিত্র কলোনিতে। রাস্তায় পড়ে খয়েরি রঙের বস্তু। ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে একটি তার, বেরিয়ে আছে দু’টো মুখ। বোমা তো এ রকমই হয়। ওই রাস্তা দিয়ে লোকজনের যাতায়াত কার্যত বন্ধ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা।

Advertisement

খারাপ খবর, বিপদের খবর দ্রুতই ছড়ায়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে কেন? আশপাশের সব বাড়িতে ঝপাঝপ দরজা-জানলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণ হলে তার অভিঘাত থেকে রক্ষা পেতে হবে তো! সব চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় সায়ক ঘোষের পরিবার। কারণ, তাঁর বাড়ি থেকে এক হাত দূরেই ওই বস্তুটি। যে কোনও মুহূর্তে যা ফাটতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী।

দ্রুত খবর গেল বেহালা থানায়। ঘটনাস্থল রেখা ফিতে বা পিও গার্ডিং টেপ দিয়ে পুলিশ ঘিরে দিল ঈশ্বর মিত্র রোডের ওই জায়গা। পুলিশ ওই রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিল।

তবে কৌতূহলী মানুষের একাংশকে পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। কয়েক ফুট চওড়া রাস্তার দু’পাশে গা ঘেঁষে পরপর বাড়ি। ছাদ থেকে, দোতলার ঘরের জানলা একটু ফাঁক করে আতঙ্কগ্রস্ত বহু জোড়া চোখ উঁকি মারছে।

ঘড়িতে একটা বেজে গিয়েছে। পুলিশ ঘিরে রেখেছে চার দিক। তার মধ্যেই এল একটি গাড়ি। লাফ দিয়ে নামল দু’টি কুকুর। যারা গন্ধ শুঁকে বলতে পারে, বোমা আছে কি না। ওই গাড়ি থেকেই নামলেন লালবাজারের বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের পাঁচ সদস্য।

গাড়ি থেকে নেমেই উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকল কুকুর দু’টি। এক বারের জন্য তাকিয়ে দেখল পড়ে থাকা ওই সন্দেহজনক বস্তুটির দিকে। কিন্তু কেমন যেন নিরুত্তাপ দৃষ্টি, উত্তেজনা নেই সারমেয় যুগলের মধ্যে! আশপাশের অলিগলিতে ঘুরতে শুরু করল তারা।

ততক্ষণে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াডের দুই সদস্য ‘বম্ব স্যুট’ পরে নিয়েছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা ওই সন্দেহজনক বস্তুটির কাছে গিয়ে তাঁরা পরীক্ষা শুরু করলেন। অনুসন্ধানী যন্ত্র দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চলল পরীক্ষা। কৌতূহলী মানুষদের কেউ কেউ তখন নিজেদের হৃদ্‌যন্ত্রের এক-একটি স্পন্দন যেন শুনতে পাচ্ছেন। অনুসন্ধানী যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা শেষ করার পরে বম্ব স্যুইট পরা এক জন হ্যাঁচকা টান দিয়ে তারটা বার করে আনলেন। কেউ কেউ মুহূর্তের জন্য চমকে গেলেন ঠিকই। তবে বিস্ফোরণ হল না। হবে কী করে? বিস্ফোরকই ছিল না!

তা হলে কী সেটা? বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের এক সদস্য বস্তুটা হাতে তুলে দেখালেন, সেটি আদতে বাবুই পাখির বাসা! যেটি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল মিত্র কলোনির বাসিন্দা ও পুলিশদের। তবে বাবুই পাখির বাসার ভিতরে ওই তার এল কী ভাবে?

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মনে তো হচ্ছে, আতঙ্ক ছড়াতে ইচ্ছে করেই কেউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বাবুই পাখির বাসায় সে-ই তার ঢুকিয়ে ওখানে ফেলে রেখেছিল। কিন্তু তার ঠেলায় তো সকলকে অকারণে হেনস্থা পোহাতে হল। কে করেছে, সেটা খুঁজে বার করতে হবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা সায়ক ঘোষের কথায়, ‘‘ওটা বাবুই পাখির বাসা শুনে দুশ্চিন্তামুক্ত হলাম।’’

নবান্ন ও বিমানবন্দর বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ফোন পেয়েই নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল পুলিশকে। বোমা না মিললেও ওই ভুয়ো ফোন যারা করেছিল, তাদের ধরেছে পুলি‌শ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভুয়ো বোমা পাওয়া গেলেও যে ওই কীর্তি ঘটিয়েছে, তার খোঁজ পাওয়া যায়নি মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত।

কবিতায় চড়াই পাখির বিদ্রূপের উত্তরে বাবুই পাখি বলেছিল, ‘নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’ সেই খাসা ঘরই এ দিন ‘বোমা’ হয়ে আতঙ্ক ছড়াল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement